ঢাকা: করোনা ভাইরাস মহামারির ভ্যাকসিন বাজারে আনতে বাংলাদেশও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্নভাবে। এরইমধ্যে সরকার ভ্যাকসিন তৈরিতে সহায়তা ও করোনাসহ নানা ধরনের ভাইরাসের গতিপথ শনাক্তকরণে ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে।
‘সেন্টার ফর নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং অ্যান্ড এনালাইটিকস স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ। ৪৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি সময় থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি (এনআইবি)।
করোনা ভাইরাসসহ অন্যান্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন এবং কোভিড-১৯ রোগসহ ভাইরাসজনিত অন্যান্য রোগ নির্ণয় করা হবে। ফলে সংশ্লিষ্ট জীবনরক্ষাকারী ভ্যাকসিন ও ওষুধ উদ্ভাবনের লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। দেশে কৃষি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও শিল্পক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অনুজীব, উদ্ভিদ, মৎস, প্রাণী, মানুষের আংশিক-পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করা হবে।
এ সংক্রান্ত তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে রোগ, জিনগত ভিন্নতা, নিরূপণ করা ইত্যাদি প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রকল্পের আওতায় আধুনিক যন্ত্রপাতি, সম্বলিত ডিএনএ সিকোয়েন্সিং গবেষণাগার স্থাপন, তথ্য সংরক্ষণাগার, তথ্য বিশ্লেষণ সুবিধা সৃষ্টি, অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ অনুজীব, উদ্ভিদ, মৎস, প্রাণী এবং মানুষের ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করা হবে।
এনআইবির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, করোনার ভ্যাকসিন তৈরির কাজে সহায়তার জন্য আমরা প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধেই পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এর আগে পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে আমরা করোনার জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছি রাতদিন পরিশ্রম করে। আমরা আমাদের পদ্ধতিকে আরও আপডেট করব। ফলে শুধু করোনা নয় অন্যান্য জিনোম সিকোয়েন্সিংও করতে পারবে। পরোক্ষভাবে প্রকল্পটি কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারলে করোনা ভাইরাসের গতিপথ নির্ণয় করতে পারব। ভাইরাসের প্রকোপ কমছে না বাড়ছে সহজেই অনুমান করতে পারব। ভাইরাসের তীব্রতা যদি কমে তাহলে ভ্যাকসিন লাগবে না, তীব্রতা বাড়লে ভ্যাকসিন লাগবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিষয়গুলো আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যাবে। ভ্যাকসিন ভাইরাস ফলোআপ করবে সেটা কোন দিকে যাচ্ছে।
তবে দুই বছর মেয়াদি একটি প্রকল্পের জন্য দুইজন পূর্ণকালীন এবং পাঁচজন খণ্ডকালীন অর্থাৎ সাতজন পরামর্শক নিয়োগে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এ সম্পর্কে সংস্থার প্রতিনধি বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী সাত ক্যাটাগরিতে সাতজন পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশে এ জাতীয় জ্ঞানসম্পন্ন জনবলের ঘাটতি রয়েছে। এ জন্য বিদেশি পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ণিত পরামর্শকদের পরামর্শ সেবা গ্রহণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ধরনের পরামর্শকের পরামর্শ ফি সাধারণত খুব উচ্চমানের। সে জন্য প্রকল্প প্রস্তাবে ভ্যাট ট্যাক্সসহ সর্বমোট চার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় গবেষণাগার সরঞ্জামাদি বাবদ মোট ৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৬১ দশমিক ০৫ শতাংশ। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনলজির আওতায় বিদ্যমান যন্ত্রপাতির সঙ্গে দ্বৈততা হবে কিনা জানতে চাইলে সংস্থার প্রতিনিধি বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি মূলত গবেষণা যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ সুবিধা সৃষ্টি করার জন্য। বর্তমানে দুটি যন্ত্রপাতি আছে, যা দিয়ে গবেষণা চালানো সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ।
‘প্রস্তাবিত সাতটি যন্ত্রপাতির মূল্য ২১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা আবদার করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাবদ ৬১ লাখ ৬০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। কম্পিউটার সফটওয়্যার বাবদ ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন, ড্রাগ, কীট উদ্ভাবনসহ জিনোম গবেষণায় অনেক ধরনের সফটওয়্যার প্রয়োজন। এ জাতীয় সফটওয়্যার খুব বেশি পাওয়া যায় না। এ জন্য প্রকল্প প্রস্তাবে দুই ক্যাটাগরির ১৫টি কম্পিউটার সফটওয়্যার বাবদ ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ’
‘যন্ত্রপাতি ও পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে এনআইবি মহাপরিচালক বলেন, আমাদের আধুনিক মেশিনটা মূলত আমেরিকা তৈরি করবে। সেখান থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হবে। আমরা মোটামুটি মার্কেট দেখেই এটা কিনব। ’
পরামর্শক ব্যয় বেশি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু প্রকল্পটি একেবারে নতুন, সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিন তৈরিসহ কোভিড-১৯ এর গতিবিধি মনিটর করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হবে। এগুলো অপারেট করার দক্ষতা আমাদের নেই। এ জন্যই মূলত বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২০
এমআইএস/টিএ