ঢাকা: ভালো কোম্পানি বাজারে এনে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে পরামর্শ দিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
একাধিক বিনিয়োগকারী, স্টোকহোল্ডার ও বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বললে তারা বাংলানিউজকে এমনটি জানিয়েছেন।
তারা জানান, বর্তমান কমিশনের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে। এই মহামারিতেও পুঁজিবাজারে লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘরে রয়েছে। কমিশন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়িত হলে বাজারে তারল্য আরও বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে কমিশন যে ডিজিটাল বুথ নীতিমালা ঘোষণা করেছে এতে করেও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলেও মনে করেন তারা।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে উৎসাহ দিয়ে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের টাকা পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার জন্য ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, সব জায়গাতে আমাদের রেমিট্যান্সের ছোঁয়া চলে এসেছে। রেমিট্যান্সের যে টাকা দেশে আসছে তার সবগুলো কিন্তু খরচ হয় না। ব্যাংকিং সিস্টেমে অনেক লিকুইড ক্যাশ আছে। এই রেমিট্যান্স যারা পাঠাচ্ছেন তাদের উৎসাহ দিয়ে আপনারা বাজারে নিয়ে আসতে পারেন।
তিনি বলেন, বিদেশে যেখানে বাংলাদেশি ভাই-বোনেরা আছেন, সেখানে আপনাদের ডিজিটাল আউটলেট ওপেন করেন। আপনাদের ডিজিটাল আউটলেট ওপেন করার জন্য যাবতীয় অনুমতি বা সহায়তা যতটুকু আমাদের পক্ষে সম্ভব সবটুকু আমরা করবো। আপনারা নিট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশি ভাই-বোনদের টাকা আনার ব্যবস্থা করেন। এর মাধ্যমে আপনারা হবেন সমৃদ্ধ এবং দেশও হবে সমৃদ্ধ।
এদিকে ০৪ নভেম্বর বিএসইসির ৭৪৭তম সভায় ব্রোকার হাউজের ব্যবসা প্রসার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য সেবা সহজীকরণের জন্য ‘ডিজিটাল বুথ (স্টক ব্রোকার/ট্রেকহোল্ডার) নীতিমালা ২০২০’ এর অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি।
সংস্থাটি বলেছে, এই নীতিমালা বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি, দেশের সব নিবাসী ও অনিবাসী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সহায়ক হবে। এই নীতিমালার অধীনে ডিজিটাল বুথ বিএসইসি কর্তৃক অনুমোদিত কোন ব্রোকারের প্রধান কার্যালয় বা কোন পূর্ণাঙ্গ শাখার সরাসরি তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে। যা দেশের ইউনিয়ন কেন্দ্র হতে উপজেলা, জেলা পর্যায়ে ব্যবসায়িক কেন্দ্রে এবং বিদেশে একইরকম এলাকায় স্থাপন করা যাবে।
শুধু ডিজিটাল বুথ নয় নতুন কমিশনের সাহসী পদক্ষেপের কারণে পুঁজিবাজার ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে। এই মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার উচিত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসা। এতে করে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে মনে করেন ব্রোকারেজ হাউজ সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, নতুন কমিশনের নানামুখী সাহসী পদক্ষেপের কারণে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক ধারা ফিরেছে। এই মুহূর্তে প্রতিদিনই লেনদেন হাজার কোটি টাকা হচ্ছে। কমিশনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরায় বাজারে লেনদেন বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।
ডিজিটাল বুথ নীতিমালা সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০১০ সালে বাজার যখন ভালো হয়েছিল তখন ব্রোকারেজ হাউজ গুলো বিভিন্ন জায়গায় ব্রাঞ্চ অফিস খুলে ছিল। দীর্ঘ পতনের কারণে অনেকেই সেগুলো আর চালু রাখতে পারেনি। তবে বর্তমান কমিশনের সাহসী চিন্তা ধারা বিনিয়োগকারীরা পজিটিভ হিসেবে নিয়ে বাজারে বিনিয়োগ করছে। তাই এই মুহূর্তে কমিশনের উচিত বিদেশি বিনিয়োগকে উদ্বুদ্ধ করতে বাজারে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিকে নিয়ে আসা। এতে করে বাজারে তারল্য বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট কমে যাওয়ায় মানুষ দেখবে কোথায় বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজারই বিনিয়োগের জায়গা হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তবে ডিজিটাল বুথ নীতিমালা অনুমোদন পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ব্রোকারেজ হাউজ গুলোর ব্যয় কমবে। নীতিমালা অনুমোদনের মাধ্যমে বিদেশেও বাংলাদেশ কমিউনিটিতে আউটলেট খোলা যাবে। এতে করে পুঁজিবাজারে বিদেশি আয় বাড়বে। যা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে, ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের ধস ছিল খুবই হতাশার। সেই ধসের পর বিভিন্ন নীতিমালার কথা বলা হলেও বাস্তবায়িত হয়নি। দীর্ঘ সময় পর বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়ন করেছেন। এতে করে আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এই মুহূর্তে সব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন চান তারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার সম্মিলিত বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লাহ নাঈম বাংলানিউজকে বলেন, অতীতে আমরা অনেক নীতিমালার কথা শুনেছি। সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। তবে বর্তমান কমিশন তার সাহসী পদক্ষেপের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি হওয়ায় বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনতে হবে। এতে করে বিদেশি বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২০
এসএমএকে/এমআরএ