ঢাকা: মহামারি করোনার সময়ে বিপদগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দুর্দশাকে কাজে লাগিয়ে, সুদ বাণিজ্যের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে রাজধানীতে। আমদানির মিথ্যা ঘোষণাপত্র দেখিয়ে ব্যাংক থেকে নয় শতাংশ হারে সুদ নিচ্ছে জেসপার গ্রুপের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট।
এই গ্রুপের প্রধান শহিদুল্লাহ হোসেন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নয় শতাংশের সেইসব ঋণ দুর্দশাগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ সুদ হারে ঋণ দিচ্ছেন। গড়ে তুলেছেন ব্যাংকের ভেতরে আরেক ব্যাংক। নির্ধারিত সময়ে টাকা দিতে না পারলে মামলা মোকাদ্দমার ভয় দেখিয়ে, দুর্দশাগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়-সম্পত্তি ও মিল কারখানা নিজের নামে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েক জন নিঃস্ব হওয়া ব্যবসায়ীরা জানান, বিএনপির শেষ শাসনামলে পাবনার জামায়াত রাজনীতিতে সক্রিয় সুদ ব্যবসায়ী জেসপার গ্রুপের কর্ণধার শহিদুল্লাহ হোসেন বড় অংকের ঋণ নেন একটি ইসলামী ব্যাংক থেকে। তা থেকে গড়ে তোলেন জেসপার ট্রেডিং।
ব্যাংক থেকে সহজ সুদে ঋণ দিয়ে প্রথমে তিনি পাবনার সহজ সরল মানুষকে চড়া সুদে ঋণ দিতে থাকেন। পরে সুদের টাকা দিতে না পারায় বাড়ি আত্মসাত করেন।
পাবনা থেকে তার সুদ বাণিজ্যের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন রাজধানী ঢাকায়। গত দশ বছরে সাধারণ ব্যবসায়ীদের লাখে ৩০ হাজার টাকা সুদে ঋণ দিতেন তিনি। সম্প্রতি করোনা মহামারিতে, সুদের হার তিনগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। চরম মন্দা সময়ে, নিজ ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে অনেক ব্যবসায়ী তার এ শর্তে ঋণ নিয়েছিলেন।
ভুক্তভোগী এসব ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ব্যাংক থেকে নয় শতাংশ সুদে টাকা নিয়ে, সুদ ব্যবসায়ী শহিদুল্লাহ হোসেন নিজে কোনো কিছু আমদানি বা কেনাকাটা না করে কাঁচামাল ও সুতা আমদানির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে। তারপর তা ৩০ শতাংশ সুদে খাটায়। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রদেয় টাকার দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা উল্লেখ করে চেক নেয়। যেমন- পাঁচ কোটি টাকা দিলে ১০ কোটি টাকার চেক নেয়। বিপদ বুঝে সুদের হার তিনগুণ বাড়িয়ে কখনো কখনো তিন গুণ টাকার চেক পর্যন্ত নেয়।
এক মাস বা দুই মাসের জন্য টাকা নিলে, সুদসহ সেই টাকা দিতে দেরি হলে, প্রতি টাকায় ১৫ পয়সা সুদ যোগ করেন জেসপারের সুদ ব্যবসায়ী শহিদুল্লাহ হোসেন। অল্প দিনেই যে টাকা নেয়, সে টাকার পরিমাণ দ্বিগুণ অথবা তিনগুণ হয়। তারপর তা দিতে না পারলে মামলা মোকাদ্দমার ভয় দেখিয়ে সহায় সম্পত্তি, মিল ফ্যাক্টরি হাতিয়ে নেয়।
জেসপারের সুদ ব্যবসায়ী শহিদুল্লাহ হোসেনের বিরুদ্ধে মসুর ডাল ও খেজুরের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণেরও অভিযোগ রয়েছে। কম দামে মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর আমদানি করে রমজানের বাজারে তার পাঁচগুণ দাম বাড়িয়ে বিক্রির সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেন শহিদুল্লাহ হোসেন। ২০১৮-১৯ সালে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও র্যাবের যৌথ অভিযানে শহিদুল্লাহ হোসেনের কোল্ড স্টোরেজে মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর সংরক্ষণের বিষয়টি ধরা পড়ে।
এছাড়া কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে নিম্নমানের মসুর ডাল আমদানি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এর দাম বাড়ায় জেসপার গ্রুপ।
কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় নিয়মিতভাবে অবৈধ অর্থ পাচার করে সেখানে বাড়ি করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি শহিদুল্লাহ হোসেনের ছেলে সেখানকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরচিালনা করেন।
লাখে ৩০ হাজার টাকার সুদ ব্যবসায় দশ বছরের ব্যবধানে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন পাবনার সুদ ব্যবসায়ী শহিদুল্লাহ হোসেন। সুদ ব্যবসায় গড়ে তুলেছেন জেসপার ট্রেডিং। জেসপার জুট মিলস আর জেসপার ফুডস নামের অস্তিত্বহীন কোম্পানির নাম দেখিয়ে ব্যাংক থেকে কয়েকশ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পাচার করেছেন। বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাবনার অনেক সহজ সরল মানুষকে লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাচারের অভিযোগ এনেছেন ভুক্তভোগীরা।
পুরানা পল্টনে তাদের অফিস থাকলেও সে অফিস কখনো দিনের বেলায় খোলা থাকে না বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। সারা রাত ধরে সে অফিস খোলা রেখে হুন্ডিসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন জেসপার গ্রুপের কর্ণধার শহিদুল্লাহ হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার ফোন করলেও, শহিদুল্লাহ হোসেন মোবাইল ফোনের কল রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২০
এসই/নিউজ ডেস্ক