ঢাকা: বাংলাদেশের করোনা ভাইরাস পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্প এবং মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে পৃথক নীতিমালা করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেন, শিল্পনীতিতে দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির বিকাশের লক্ষ্যে আরও বেশি প্রাধান্য দেওয়াসহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের লক্ষ্যে শুল্ক ও নীতি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
রোববার (২৯ নভেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘শিল্পনীতির সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শামস মাহমুদের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. আতিউর রহমান। এছাড়া ওয়েবিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মাসুদুর রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শামস মাহমুদ বলেন, প্রয়োজনীয় গবেষণা ও বিনিয়োগের অভাবে দেশের উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে বেশ সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গত তিন দশকে বাংলাদেশের শিল্পখাত প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও তা ছিল মূলত রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত নির্ভর, তবে শিল্পখাতের বহুমুখীকরণে চামড়া, পাট, কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, জাহাজ নির্মাণ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রভৃতি শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা একান্ত আবশ্যক। এজন্য একটি নীতিমালা এবং মাঝারি শিল্পের জন্য পৃথক নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বাংলাদেশে করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এজন্য অতিক্ষুদ্র, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, বৃহত্তর শিল্পের ফরোয়ার্ড ও ব্যকওয়ার্ড লিঙ্কেজকে শক্তিশালী করা, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গ্রামীণ ও শহরে বসবাসকরীদের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস করার লক্ষ্যে আগামী শিল্পনীতি প্রণয়ন করা হবে।
তিনি বলেন, অগ্রাধিকারমূলকখাতগুলোতে নীতি সহায়তা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আয়ত্বকরণের প্রযুক্তি, দক্ষতা উন্নয়ন ও করোনা বা দুর্যোগ মোকাবিলায় টেকসই দিকনির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি নতুন জাতীয় শিল্পনীতিতে গুরুত্ব পাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। নতুন শিল্পনীতি ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন এবং ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও উন্নত করতে ভূমিকা রাখবে এবং এর ফলে নতুন দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আরও অধিক পরিমাণে আকৃষ্ট হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, করোনার প্রভাবে অর্থনীতিতে সমস্যার সৃষ্টি হলেও সমন্বিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এটি একটি বিশেষ সুবিধা সৃষ্টি করে দিয়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি আগামীতে আরও মজবুত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে রয়েছে, এ ধারাকে আগামীতে অক্ষুন্ন রাখতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি সমন্বিত ও সবুজ অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। করোনাজনিত সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে চাঙ্গা রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
ওয়েবিনারে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট (বিল্ড) -এর চেয়ারপারসন আবুল কাশেম খান শিল্প খাত সংশ্লিষ্ট সব নীতিমালার মধ্যে একটি সমন্বয় সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নবীন উদ্যোক্তারা যাতে সহজে নতুন ব্যবসা শুরু করতে পারেন সেজন্য ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতি সহজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এসএমই খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা অর্থায়নের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থার নতুন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে উদ্যোক্তাদের আরও মনোযোগী হতে হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এসএমই ক্লাস্টারগুলোতে কমন ফ্যাসিলিটি নিশ্চিত করতে এসএমই ফাউন্ডেশন কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-এর অধ্যাপক ড. মো. আবু ইউসুফ।
মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়ন হলেও কাঙ্খিত বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি।
তিনি বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকার কর্তৃক প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ার ফলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তারা যেন প্যাকেজ-এর সুবিধা পেতে পারেন তা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। শিল্পনীতির বাস্তবায়ন পর্যালোচনার জন্য একটি অ্যাকশন প্ল্যান থাকা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।
ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক-এর এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হোসনে আরা শিখা, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ ফর লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)-এর চেয়ারপার্সন ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২০
জিসিজি/আরআইএস