ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কৃষকের লাভে ভাগ বসাচ্ছে ফড়িয়ারা

এসএমএ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২১
কৃষকের লাভে ভাগ বসাচ্ছে ফড়িয়ারা ...

ঢাকা: শীতকালীন সবজির প্রচুর আবাদ হলেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রান্তিক চাষি। ফলন ভালো হলেও উৎপাদন ব্যয় মেটাতে খেতে হচ্ছে হিমশিম।

তবে কৃষক দাম না পেলেও ফসলের লাভ ঠিকই তুলে নিচ্ছেন ফড়িয়ারা।  

ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ের একাধিক প্রান্তিক কৃষকের সঙ্গে আলাপকালে তারা বাংলানিউজকে এমনটি জানান।

কৃষকরা জানান, ফসল ওঠার শুরুর দিকে সবজির দাম কিছুটা পেলেও বর্তমান অবস্থায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। উৎপাদন ভালো করেও ব্যয় মেটাতে পারছেন না।

সবজি উৎপাদনের পর বিক্রি থেকে যে আয় আসছে এতে লাভ তো দূরের কথা চালানই থাকছে না। আর ব্যাপারীরা নানা অজুহাতে সবজির দাম কমাচ্ছেন বলে জানালেন ধামরাই থানার ঢুলিভিটা ইউনিয়নের কৃষক শরিফ মিয়া।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ফসল যখন নতুন ওঠা শুরু হয় তখন সবজির কিছুটা দাম পেয়েছিলাম। এখন যে সবজিগুলো উঠছে এতে দিন শেষে কামলা খরচও ওঠে না। এছাড়া ব্যাপারীরাও নানা অজুহাতে সবজির দাম কম দিচ্ছে।

কৃষক ফসল ফলাচ্ছেন কিন্তু দাম পাচ্ছেন না, তাদের লাভ খেয়ে ফেলছে মধ্যসত্ত্বভোগীরা বলে জানান সাভার সিঙ্গাইরের প্রান্তিক কৃষক মিলন মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের সবজি তিনটি হাত ঘুরে ভালো দামে বিক্রি হলেও আমরা দাম পাই না। একটি ফুলকপি বাজারে খুচরা ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হলেও আমরা এটির দাম ৫ টাকাও পাই না। অথচ একটি ফুলকপি উৎপাদন করতে ১০ থেকে ১৫ টাকা খরচ পড়ে যায়। শুধু তাই নয় লাউ, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, শাকসহ সব সবজিতেই আমাদের পুঁজি উঠছে না। এভাবে চলতে থাকলে পেশা পরিবর্তন ছাড়া উপায় নেই।  

ধামরাইয়ের চৌহাট ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষক লিমন মিয়া বলেন, চার বন্ধু মিলে ৮ লাখ টাকা ব্যয় করে ফসল বুনেছিলাম। কিন্তু ফসলের যে দাম পাচ্ছি তাতে চালানের অর্ধেকও উঠবে কিনা জানি না। সামনের দিনগুলোতে আমাদের টিকে থাকাটা অনেক কঠিন হবে।  

এদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃষকের চেয়ে অনেক বেশি লাভ করেন। চাষির পণ্য বিক্রি করে কয়েক গুণ বেশি লাভ করেন এই মধ্যসত্ত্বভোগীরা।

স্থানীয় বাজারগুলোতে দেখা যায়, প্রতিটি সবজি কৃষকের কাছ থেকে কিনে মধ্যসত্ত্বভোগীরা ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছে। শুধু তাই নয়, এই সবজিগুলো যখন ঢাকায় আসছে সেটি দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তবে উৎপাদন বেশি হওয়ায় সবজির দাম কমে গেছে বলে মনে করেন মধ্যসত্ত্বভোগীরা। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহনে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায়ও কৃষক সবজির দাম কিছুটা কম পাচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

এ ব্যাপারে চৌহাট ইউনিয়নের মধ্যসত্ত্বভোগী সোবহান মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় সবজির দাম কমে গেছে। বাজারে যখন উৎপাদন কম ছিল সবজির বেশি দাম ছিল। সে সময় কৃষকরা দাম পেয়েছে। এখন দাম কম থাকায় আমরাও কম দাম দিয়ে সবজি কিনছি।  

তবে মধ্যসত্ত্বভোগীদের লোকসানে খুব একটা পড়তে হয় না বলে তিনি উল্লেখ করেন।  

বাংলাদেশের অগ্রগতি, সাফল্যের বড় কৃতিত্ব কৃষকদের। অথচ ফসল ভালো ফলানোর পরও কৃষকের মুখে হাসি নেই। তাদের হাসি ফেরাতে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। পণ্য উৎপাদনে সহায়তা, পরিবহন আর ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে বাপ-দাদার পেশা পরিবর্তন করতে অনেকেই বাধ্য হবে বলে মনে করেন প্রান্তিক কৃষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২১
এসএমএকে/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।