ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আমদানিকারক তানাজ এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২১
আমদানিকারক তানাজ এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির মামলা

ঢাকা: ভ্যাট গোয়েন্দা বাণিজ্যিক আমদানিকারকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা করা হয়েছে।

 

মঙ্গলবার (২ মার্চ) ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি হলো তানাজ এন্টার প্রাইজ।

একজন গ্রাহক সুনির্দিষ্ট ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ করায় ভ্যাট গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠানের নাখালপাড়া কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে।  

সংস্থার উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার অভিযানটি পরিচালনা করেন।

এ আমদানিকারকের বিরুদ্ধে আইসিডি কাস্টম হাউস দিয়ে ব্যাটারির একটি চালানে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য খালাস করার অভিযোগ ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বরএকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দা এবিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করে।  

ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযানকালে দেখা যায়, নাখালপারার নয় তলা ভবনের নয় তলায় একটি কক্ষে প্রতিষ্ঠানটির অফিস যা তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। ভবনের সিকিউরিটি গার্ড জানান প্রতিষ্ঠানটির মালিক উক্ত একই ভবনের ৭ম তলায় থাকেন। গোয়েন্দা দল ওই ফ্লোরে গিয়ে সরকারি কাজে সহযোগিতা চাইলে প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ এতে সাড়া দেননি।  

প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সরকারি কাজে অসহযোগিতার কারণে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের পুলিশের সহায়তা নেওয়া হয়। তেজগাঁও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে নবম  তলায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির অফিস কক্ষের তালা ভেঙে প্রবেশ করে ভ্যাট গোয়েন্দার দল। অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে রক্ষিত বাণিজ্যিক কাগজপত্র জব্দ করা হয়।  

স্থানীয় ভ্যাট সার্কেল অফিস ও অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত দলিলাদি সংগ্রহ করা হয়েছে।  

এসব দলিলাদি পর্যালোচনা শেষে ভ্যাট গোয়েন্দার দল উক্ত আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দার তদন্ত অনুসারে, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ উপকরণ-উৎপাদনসহ দাখিল না করে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৮ টাকা রেয়াত গ্রহণ করে, যা মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ধারা ৪৬ মোতাবেক অবৈধ।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ২ কোটি ৬৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৬১ টাকার পণ্য সরবরাহ করে। এতে ৩৯ লাখ ৮১ হাজার ৬৬১ ভ্যাট ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়।

এ ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৪ লাখ ৯০ হাজার ২৪৩ টাকা আদায়যোগ্য হয়েছে।  

তদন্তে অবৈধ রেয়াত বাবদ ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৮ টাকা, ভ্যাট ফাঁকি ৩৯ লাখ ৮১ হাজার ৬৬১ ও প্রযোজ্য সুদ বাবদ প্রায় ৪ লাখ ৯০ হাজার ২৪৩ টাকাসহ সর্বমোট ১ কোটি ৮০ লাখ ১১ হাজার ৫৯০ টাকা ফাঁকি উদঘাটন করা হয়।  

ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ আইন অনুসারে মামলা দায়ের করা হয়েছে।  

এ টাকা আদায়ের আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মামলাটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা উত্তরে পাঠানো হবে। মামলাটি ন্যায় নির্ণয়নে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমদানিকারকের বিরুদ্ধে এ  দাবি করা টাকার অতিরিক্ত দ্বিগুণ পরিমাণ জরিমানা হতে পারে।

তদন্তে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম ভ্যাট গোয়েন্দার অডিটের আওতায় আনা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার ধারণা, কাস্টম হাউসে আন্ডার-ইনভয়েসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পণ্য খালাস করে ভ্যাট কর্তৃপক্ষের কাছে কম মূল্য সংযোজন ঘোষণা করেছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ ভ্যাট রাজস্ব হারিয়েছে।  

আমদানিকারক তানাজ এন্টারপ্রাইজ ভ্যাট গোয়েন্দার ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর একটি অনুসন্ধানের নোটিশ মহামান্য হাইকোর্টে রিট (রিট নং ৬০২৪/২০২০) দায়ের করে স্থগিত করে। পরে ভ্যাট গোয়েন্দার পক্ষ থেকে মাননীয় চেম্বার জজ আদালতে সিএমপি (নং ৬৬৮/২০২০) দায়ের করে উক্ত স্থগিতাদেশ স্থগিত করা হয়। এর পরিপ্রক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযানটি পরিচালনা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২১
এসএমএকে/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।