ঢাকা: ব্যাংকিং খাতে খেলাপিদের পক্ষে কাজ করার প্রবণতা এখনও রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত দ্বিতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলনে ‘পাঁচ দশকের উন্নয়ন অভিযাত্রায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অনলাইন মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক কঠিন সময় পার করেছে। তবে ব্যাংকিং খাতে খেলাপিদের পক্ষে কাজ করার প্রবণতা এখনও রয়ে গেছে।
অর্থপাচার বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংককে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে খেলাপি বাড়ছে। ২০০০-২০০১ সালের দিকে খেলাপিকে সামাজিক ব্যাধি হিসেবে বোঝাতে চেয়েছি। তবুও খেলাপি কমানো যাচ্ছে না। দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন ডয়ারে চলে গেলে দুর্নীতির প্রবাহ বাড়ে। ঋণ খেলাপির পক্ষে যেন আইনজীবী না দাঁড়ায়, এ নিয়ে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
সাবেক গভর্নর বলেন, আমদানি বা রপ্তানির জন্য আলাদা এক্সচেঞ্জ রেট কিংবা রেমিট্যান্স ও রপ্তানিকারকদের বিশেষ প্রণোদনা অর্থনীতিশাস্ত্র সম্মত নয়। সম্প্রতি আমাদের রেমিট্যান্স কমছে, এটা ভালো মনে হচ্ছে না। আবার আমাদের রপ্তানি কমছে বিপরীতে আমদানি বাড়ছে ব্যাপক হারে, এটার দিকেও নজর দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রসঙ্গে ফরাসউদ্দিন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার শুরুতে বহির্বাণিজ্য কঠিন ছিল। নানা চ্যালেঞ্জ নিয়েই শুরু করে আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাংক। এখন ডেভেলপমেন্টের ভূমিকা রাখছে সেন্ট্রাল ব্যাংক।
সাবেক গভনর্র ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন গভর্নর দায়িত্ব পালন করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজের ধারাবাহিকতা ছিল। ভালো কাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন হারাতে বসেছে বলে মনে করেন তিনি। এজন্য ব্যালেন্স রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকে কাজ করার পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার দ্রুত বাড়ছে। দেশের মাঝারি ও ক্ষুদ্র মাঝারি খাতকে অর্থনীতির প্রাণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। দেশের মোট ঋণের ২০ শতাংশ এখাতেই বিতরণ হয়। ২০২৪ সালের মধ্যে এ ঋণ প্রবাহ ২৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যের কথাও জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
অনুষ্ঠানে অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রকের ভূমিকার পাশাপাশি উন্নয়নেও সহযোগী হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতার কারণেই করোনা প্রনোদনা ঋণ বিতরণ সহজ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ ব্যাংকিং খাতের সহযোগিতার কারণেই করোনার মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ সরকারি ব্যাংকগুলোকে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানান। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ড. আতিউর রহমান ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। সিটি ব্যাংক লিমিটেডের এমডি ও সিইও মাসরুর আরেফিনের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
জিসিজি/এমজেএফ