রাজবাড়ী: বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রাজবাড়ী জেলার অবস্থান। দেশে উৎপাদিত মোট পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ উৎপাদন হয় এই জেলায়।
রাজবাড়ী জেলার পাঁচটি উপজেলাতেই পেঁয়াজের চাষ হয়। তবে জেলার কালুখালী, বালিয়াকান্দি ও পাংশা উপজেলায় পেঁয়াজের চাষাবাদ বেশি হয়।
এ জেলায় মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজের আবাদ করেন চাষিরা। এখন ক্ষেত থেকে হালি পেঁয়াজ সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
চলতি মৌসুমে রাজবাড়ী জেলায় পেঁয়াজ চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষিবিভাগ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ২০২১-২২ অর্থ বছরে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এ বছর রাজবাড়ীতে ৩৪ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে ২ হাজার ৮৬৫ হেক্টর বেশি। চাষাবাদ বেশি হওয়ায় উৎপাদনের হারও বেড়েছে।
কৃষিবিভাগের তথ্য মতে, এ বছর রাজবাড়ীতে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে দিনব্যাপী মাঠ থেকে পেঁয়াজ তোলা এবং পেঁয়াজ পরিষ্কার করে ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জেলার চাষিরা। পুরুষেরা মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলে এনে বাড়ির উঠানে নামাচ্ছেন। নারীরা সেই পেঁয়াজ পরিষ্কার করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন।
গত বছরের চেয়ে কম দামে পেঁয়াজের বীজ কেনা, চারার দাম কম, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ব্যাপকহারে পেঁয়াজে আবাদ করেছেন বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। তবে চলতি মৌসুমে শ্রমিকের মজুরি, তেলের দাম এবং সেচের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এবং পেঁয়াজের মাটি প্রস্তুতে খরচ বেশি হওয়ায় চাষিরা কিছুটা হতাশ।
পেঁয়াজ চাষিরা জানান, যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে তাতে বাজারে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় লাভের চেয়ে লোকসানের আশঙ্কা বেশি। চাষিদের দাবি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে পেঁয়াজ চাষিদের লোকসান আরও বাড়বে। মাঠ পর্যায়ের চাষিরা পাইকারদের কাছে প্রতিমণ হালি পেঁয়াজ আকার ভেদে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন।
পাইকাররা রাজবাড়ীর বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে বিক্রি করেন।
রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের বহর কালুখালীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পেঁয়াজ চাষি মো. আব্দুল হালিম জানান, আমাদের এখানে ২৬ শতাংশে ১ পাখি জমি। এ বছর আমি আড়াই পাখি জমিতে হালি পেঁয়াজের চাষ করেছি। শতাংশে ১ মণ করে পেঁয়াজ হয়েছে। মৌসুমে কয়েকবার অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিতে ফলন বেশি হয়নি। আমাদের হিসাবে ১ শতাংশ জমিতে দেড় মণ করে পেঁয়াজ হওয়ার কথা।
কৃষক তরিকুল ইসলাম জানান, কালুখালীতে পেঁয়াজের ব্যাপক চাষাবাদ হয়ে থাকে। আমি ২ পাখি জমিতে হালি পেঁয়াজের চাষ করেছি। এখন ক্ষেত থেকে পেয়াজ উঠিয়ে বাজারে নিচ্ছি। প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজারে বিক্রি হচ্ছে। তবে ভরা মৌসুমে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হলে আমরা লোকসানে পড়বো।
আরেক পেঁয়াজ চাষি ইকরাম হোসেন বলেন, পৌষ মাসে হালি পেঁয়াজ রোপণ করেছিলাম। চৌত্র মাসে পেঁয়াজ উঠেছে। পাইকাররা আমাদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনে ট্রাকে বোঝাই করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে। এ বছর পেঁয়াজ বিক্রির টাকা দিয়ে বাড়িতে একটা গাভী কিনবো।
রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের বড় বাজারের পেঁয়াজের আড়ৎ মেসার্স লস্কর ট্রেডার্সের আড়তদার মো. ফিরোজ লঙ্কর জানান, প্রতিমণ পেঁয়াজ সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা মণ প্রতি ক্রয় করা হচ্ছে।
পাইকার মজিবর শেখ বলেন, আমি এখান থেকে পেঁয়াজ কিনে কুমিল্লা জেলায় নিয়ে বিক্রি করছি।
আরেক পাইকার সঞ্জয় দেউরী বলেন, জঙ্গল ইউনিয়ন থেকে পেঁয়াজ কিনে ট্রাকে লোড দিয়ে আমি যশোরের বাজারে নিয়ে যাচ্ছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এস এম সহিদ নূর আকবর জানান, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছু পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হলেও আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে গিয়ে চাষিদের সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ শেষে এখন চৈত্র মাসে হালি পেঁয়াজ বাজারে এসেছে।
২০২১-২২ অর্থ বছরে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এ বছর রাজবাড়ীতে ৩৪ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে ২ হাজার ৮৬৫ হেক্টর বেশি। চাষাবাদ বেশি হওয়ায় উৎপাদনের হারও বেড়েছে। এ বছর রাজবাড়ীতে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২২
আরএ