ঢাকা: ২০৪০ সালের মধ্যে দেশে তামাকের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পরও থেমে নেই তামাকজাত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি)। সিগারেটের উৎপাদন বাড়াতে বিএটিবি সাভারের কারখানায় আরও ৫৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করছে।
বহুজাতিক এই তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি সরকারের তামাক নির্মূলের উদ্যোগ ব্যর্থ করতে নানা ধরনের অপকৌশল অবলম্বন করছে। সারাদেশে কৃষকদের অগ্রিম সার-বীজ ও টাকা দিয়ে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। এতে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে দিন দিন আমদানি নির্ভরতাও বাড়ছে। প্রতি বছর বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানি করছে সরকার। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তামাক পাতা রপ্তানি করছে বিএটিবিসি।
তামাক বিরোধী জোট প্রজ্ঞার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তামাক ব্যবহারের ফলে দেশের প্রতি ৫ জনে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। যা মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ৫১ শতাংশ নারী এবং দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬৭ শতাংশ পুরুষ জানেই না যে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে তামাক ব্যবহার বন্ধের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের ৩০-৩১ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ শীর্ষক ‘সাউথ এশিয়ান স্পিকার সামিট’র সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর একটি চিঠি ইস্যু করে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেও তামাকজাতপণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানির কূটকৌশলে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানির (বিএটিবিসি) ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন করে ৫৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তামাক পাতা রপ্তানি ও উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করতে সাভারের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করতে কোম্পানিটি নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিগারেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালেও একই কারখানায় উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে ৫১৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানির (বিটিবিসি) হেড অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স শেখ শাবাব আহমেদ বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে ভবিষ্যৎ রপ্তানি সম্ভাবনার দিকে তাকিয়ে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ বোর্ড আমাদের সাভার কারখানায় সক্ষমতা তৈরি করতে ৫৭৪ কোটি ২০ লাখ বিনিয়োগ অনুমোদন করেছে। আমরা বিশ্বাস করি উন্নত সামর্থ্যের সাথে আমরা ভবিষ্যতের যেকোনো চাহিদার জন্য সজ্জিত করতে সক্ষম হবো।
এদিকে নতুন বিনিয়োগের খবর ছড়িয়ে পড়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বিএটিবিসির স্টক শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়ে ৫৮৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বিএটিবিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে কোম্পানির নেট টার্নওভার ২৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকায়, যা আগের বছরে ছিল ৬ হাজার ২৯ কোটি টাকা।
একই সময়ে লন্ডন-ভিত্তিক কোম্পানিটি ১ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
বিএটিবিসির ঢাকা ও সাভারে সিগারেট কারখানা, কুষ্টিয়ায় তামাক পাতা মাড়াই কারখানা, মানিকগঞ্জে তামাক পাতা পুনরায় শুকানোর কারখানা এবং সারাদেশে তামাক পাতা বিক্রয় অফিস রয়েছে।
এমনকি কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও বিএটিবিসি ২০২১ সালে ১৭টি দেশে তামাক পাতা রপ্তানি করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০২২
এসই/এমজেএফ