ঢাকা: টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলজি (ফিনটেক) অবলম্বনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. সেলিম উদ্দিন।
শনিবার (২ এপ্রিল) ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ইসলামী ব্যাংক ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ একাডেমি (আইবিটিআরএ) আয়োজিত এক্সিকিউটিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে চিফ মডারেটর হিসেবে বক্তব্য দেন ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। গেস্ট পারটিসিপেন্ট ছিলেন ব্যাংকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মুহাম্মদ কায়সার আলী ও মো. ওমর ফারুক খান। সভাপতিত্ব করেন আইবিটিআরএ এর প্রিন্সিপাল এস এম রবিউল হাসান। ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, চিফ রিস্ক অফিসার, ক্যামেলকো, ঊর্ধ্বতন নির্বাহী, জোন প্রধান ও শাখাপ্রধানরা অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়াল প্লাটফর্মে যুক্ত হন।
প্রফেসর ড. মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের অবকাঠামোগত প্রস্তুতি, মোবাইল নেটওয়ার্ক কভারেজ, ই-গভর্নেন্স ও ডিজিটাল পরিষেবাগুলোর সহজলভ্যতার ক্ষেত্রে ভালোভাবেই এগোচ্ছে। বাংলাদেশে ফিনটেক ইকোসিস্টেমের আকার বাড়ছে এবং আগামী বছরগুলোতেও তা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আর্থিক কার্যক্রমে অটোমেশন ও ডিজিটালাইজ করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের তুলনায় আরো বেশি গতিশীল হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান লাইট ক্যাসেল পার্টনার্সের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ফিনটেক ইন্ডাস্ট্রির বাজার বর্তমানে অসম্পৃক্ত অবস্থায় রয়েছে যেখানে উদ্ভাবনী আর্থিক পরিষেবা প্রসারের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। জাতীয় ডাটাবেজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে আর্থিক খাতে গতি বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, জাতীয় প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে আমাদেরকে ইন্টারনেট সংযোগের অ্যাক্সেস, মান ও গতি এবং মোবাইল ডিভাইস ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব ও মনোযোগ দিতে হবে।
তিনি বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগসমূহের কথা তুলে ধরেন। চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি, সাইবার-ক্রাইম, আস্থা ও সুসম্পর্ক তৈরি করা আর ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা। অন্যদিকে এর সুযোগসমূহ হচ্ছে বর্ধিত গ্রাহক অভিজ্ঞতা, নিরাপত্তা ও দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ফিনটেকের জন্য সহজলভ্যতা।
তিনি বলেন, বিশ্বে সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি-(সিডিবিসি) দ্রুত বাড়ছে। ৮৭টি দেশ সরকারি ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে কাজ করছে এবং ৭টি দেশে এটা পূর্ণরূপে চালু হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের কল সেন্টারের পরিবর্তে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বট, এটিএম বুথের পরিবর্তে ক্যাশবিহীন লেনদেন এবং অডিট এড়াতে ব্লক-চেইনের উপর ফোকাস করতে হবে। টেকসই প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য তিনি অ্যাপস এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বের ৫২২ কোটি ইউনিক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীকে ফিনটেকের আওতায় আনার উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, গ্লোবাল ফিনটেক মার্কেট ২০২৬ সালের মধ্যে ৩২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। এ পরিবর্তন ও উন্নয়নকে গ্রহণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও জাতীয়ভাবে উচ্চ বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি।
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ফিনটেক সলিউশনের মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিয়ে ইসলামী ব্যাংক কাজ করছে। এই ব্যাংক সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক সেবা প্রদান করছে। ফিনটেক ব্যবহার করে আর্থিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের আর্থিক সেবার আওতায় আনতে ইসলামী ব্যাংকের ৬ হাজারের অধিক ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। তিনি সবাইকে ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন অ্যাপ, ইন্টারনেট ব্যাংকিংসহ অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ সেবা গ্রহণের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২২
কেএআর