যশোর: ঈদ পরবর্তী দ্বিতীয় হাটে চামড়ার জমজমাট বেচাকেনা হয়েছে যশোরের রাজারহাটে। শনিবার (১৬ জুন) এ মোকামে চামড়ার যোগান ছিল ভালো।
এদিন কোটি টাকার চামড়ার হাতবদল হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার চামড়ার দাম বাড়িয়েছে সরকার। তারপরও বরাবরের মতই দাম নিয়ে হতাশ মৌসুমি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনছেন না ব্যবসায়ীরা। হাট জমলেও বাইরের বেপারী ও কোম্পানির লোক না আসায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হতে হচ্ছে তাদের।
হাটে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ পরবর্তী বড় হাটে চামড়ার দাম না পেয়ে তারা হতাশ। সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। অনেকেই প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন নির্ধারিত দামের অর্ধেকে। আর ছাগলের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় সেগুলোর দাম পাওয়াই দুষ্কর। এদিন সকালে যশোরসহ নড়াইল, সাতক্ষীরা ও মাগুরার বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে রাজারহাটে আসেন।
গোপালগঞ্জ থেকে আসা জয়ন্ত পোদ্দার বলেন, এবার ৫০০ পিস গরুর চামড়া কিনেছি। হাটে ২০০ পিস গরু ও ১০০টি ছাগলের চামড়া এনেছি। গরুর চামড়া ৭০০ টাকা দরে আর ছাগলের চামড়া ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। গরুর চামড়া প্রতি খরচ বাদ দিয়ে ১০০ টাকা করে গচ্চা গেছে। এছাড়া গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে আমার। আশা করছি, আগামী শনিবারের হাটে দাম ভালো পাওয়া যাবে। দাম না পেলে পুঁজি শেষ হয়ে যাবে।
ফরিদপুরের ব্যবসায়ী বিপুল দাস বলেন, হাটে ৫০০ পিস গরুর চামড়া এনেছি। প্রতিটি চামড়া কিনেছি ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। লবণ, শ্রমিক খরচ ও পরিবহন বাবদ প্রতিটি চামড়ায় আরও ২০০ টাকা করে খরচ হয়েছে। হাটে বড় চামড়া বিক্রি করেছি ৯০০ টাকা, আর ছোটগুলো ৪০০ টাকা দরে। এর মধ্যে ২০টি চামড়া বিক্রি হয়নি। গড়ে চামড়া বিক্রি হয়েছে সাড়ে ২২ টাকা ফুট দরে। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দামের অর্ধেক পেয়েছি।
আরেক চামড়া ব্যবসায়ী ফুলচাঁন দাস বলেন, আমরা এক হাজার পিস ছাগলের চামড়া কিনেছিলাম। চামড়ায় লবণ দেওয়া ছিল। লবণের দাম বেশি ও শ্রমিক না পাওয়ায় প্রায় ১২০০ পিস চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ট্যানারিগুলো ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট চামড়া সর্বোচ্চ ৪৪ টাকা দর দিলেও এই চামড়াকে প্রয়োজনীয় লবণ দিয়ে উপযুক্ত করে তুলতে তাদের প্রতি বর্গফুটের দাম পড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আর ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা না দেওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও তারা বেশি চামড়া কিনতে পারেনি।
বৃহত্তর যশোর চামড়া হাটের সাবেক ইজারাদার ও চামড়া ব্যবসায়ী সিফাত বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত দামে ভালো মানের গরুর চামড়া কিনেছি। তবে নষ্ট হয়ে যাওয়া চামড়া কম দামে বিক্রি হবে এটা স্বাভাবিক। কেননা এবার বেশিরভাগ হাটে উঠা চামড়া নানা কারণে নষ্ট হয়ে গেছে।
চামড়া হাটের ইজারাদার শেখ হাসানুজ্জামান হাসু বাংলানিউজকে বলেন, সরকার নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন। ক্ষুদ্র বিক্রেতারা বেশি দামে চামড়া কিনলে লোকসানতো হবেই। তবে, কিছু ছাগলের চামড়া প্রসেসিংয়ের অভাবে নষ্ট হয়েছে। এদিন এক কোটি টাকার চামড়া কেনাবেচা হয়েছে।
ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল।
তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে এবার চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। সরকার নির্ধারন করা দামেই চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে। সকাল হতে ৪০-৪৩ টাকা ফুট দরে চামড়া বিক্রি হয়েছে। আশানুরুপ চামড়া উঠেছে হাটে। শনিবার (১৬ জুলাই) কমপক্ষে ৫০ হাজার গরু ও ৫০ হাজার ছাগলের চামড়া উঠেছে।
বৃহত্তর যশোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মমিনুল মজিদ বলেন, সরকার নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন। ভালোমানের চামড়ার দাম বিক্রতারা পেয়েছেন। এদিন হাটে বিপুল পরিমাণ চামড়া নিয়ে আসেন বিক্রেতারা।
এদিকে চামড়া ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে বেপারীরা চামড়া কিনতে এসেছেন এখানে। ভালো দামেই চামড়া বেচাকেনা হচ্ছে। তবে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে ট্যানারি মালিকদেরকে অবশ্যই বকেয়া পরিশোধের মানসিকতায় ফিরতে হবে।
রাজারহাট মোকামে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩ শতাধিক আড়ত রয়েছে। যেখানে প্রায় ২০ হাজার ব্যবসায়ী এর ওপর নির্ভরশীল। শনিবার এ হাটে ৫০ হাজারের বেশি চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। বেচাকেনা করতে আসেন খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ছাড়াও ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর এবং ঢাকার বড় বড় ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২২
এএটি