ঢাকা: করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৪ শতাংশ সুদ হারে আরো ৪০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন। একজন উদ্যোক্তা সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন।
বুধবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন অংশীদার ১৫টি ব্যাংক ও ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, করোনা মহামারি পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক পুনরূদ্ধার ত্বরান্বিতকরণ এবং পল্লী এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ঋণদান কর্মসূচি সম্প্রসারণের নিমিত্ত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে দুই ধাপে ৩০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়, যা ইতোমধ্যেই উদ্যোক্তা পর্যায়ে বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। অর্থ বিভাগের পরামর্শ মতো প্রত্যাবর্তন অর্থ এবং নিজস্ব তহবিল দিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশন একটি ‘রিভলভিং ফান্ড’ গঠন করেছে।
রিভলভিং ফান্ড থেকে এসএমই উদ্যোক্তা, ক্লাস্টার, ক্লায়েন্টেল গ্রুপ, অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারের সদস্য ও নারী-উদ্যোক্তাদের মাঝে এই ঋণ বিতরণ করা হবে। ফাউন্ডেশনের ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির আওতায় রিভলভিং ফান্ড পরিচালনার পলিসি গাইডলাইন প্রস্তুত করা হয়েছে।
চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ১৮টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, দ্য প্রিমিয়ার ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পলিসি গাইডলাইন অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ের অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
অগ্রাধিকারভুক্ত এসএমই সাব-সেক্টর, ক্লাস্টার এবং ভ্যালু চেইনের আওতাভুক্ত উদ্যোক্তা। সারাদেশের নারী-উদ্যোক্তা। নতুন উদ্যোক্তা অর্থাৎ যারা এখনো ব্যাংক থেকে ঋণ পাননি। পশ্চাদপদ অঞ্চল, উপজাতীয় অঞ্চল, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ট্রেডবডি, এসএমই অ্যাসোসিয়েশন, নারী-উদ্যোক্তা সংগঠন, নাসিব এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে এমন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সুপারিশকৃত উদ্যোক্তা।
গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা হবে সর্বোচ্চ ৩ বছর, ৬ মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। মোট ঋণের ২৫ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করতে হবে এবং ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তার ঋণ ১০ লাখ টাকা বা তার চেয়ে কম পরিমাণের হতে হবে। ক্লাস্টার ও সেক্টরের ভ্যালু চেইন যেমন, টেক্সটাইল খাতের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, সুতা, রং, স্ক্রিন প্রিন্ট, প্যাকেজিং, খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রেতা, সরবরাহকারী এবং উৎপাদিত পণ্য পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা অগ্রাধিকার পাবেন।
ভ্যালু চেইনের উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ঋণ ব্যবসা (ট্রেডিং) খাতে প্রদান করা যাবে। ব্যাংকার-কাস্টমার সম্পর্ক ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৫জন উদ্যোক্তার অনুকূলে গ্রুপভিত্তিক ঋণ বিতরণ করা যাবে। ফাউন্ডেশন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম নিয়মিতভাবে মনিটরিং করবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান এবং ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রণোদনা প্যাকেজ রিভলভিং ফান্ড থেকে ঋণ বিতরণ নীতিমালার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন মহাব্যবস্থাপক নাজিম হাসান সাত্তার।
বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২২
জিসিজি/এসআইএস