ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লঞ্চের কেবিন ভাড়া বাড়লে যাত্রী হারানোর শঙ্কা

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২২
লঞ্চের কেবিন ভাড়া বাড়লে যাত্রী হারানোর শঙ্কা

বরিশাল: জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নৌ-যানের যাত্রী ভাড়া ৩০ শতাংশ সমন্বয় (বৃদ্ধি) করে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে এ ভাড়া নিয়ে বরিশাল অঞ্চলে যাত্রীদের মাঝে বেশ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।



মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকাল থেকে বরিশাল নদীবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন।

মেহেন্দীগঞ্জের শ্রীপুরের বাসিন্দা তারেক বাংলানিউজকে বলেন, ভাড়া বাড়ার আগে প্রতিদিন ক্লাস করতে শ্রীপুর থেকে লঞ্চে করে বরিশাল আসতাম। তখন ৬০ টাকার ভাড়া স্টুডেন্ট হওয়ার কারণে ৪০ টাকা রাখতো। লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণার পর মঙ্গলবার সে ভাড়া ৮০ টাকাই রাখলো। এখন মনে হয়, আর প্রতিদিন ক্লাস করা সম্ভব হবে না। ভোলা-বরিশাল রুটের যাত্রী করিম হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, ৯০ টাকার ভাড়া ১২০ টাকা আর ১২০ টাকার ভাড়া দেড়শ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে একরাতের মধ্যে এতো টাকা ভাড়া বাড়লো, এতে তো যাত্রীদের কোনো লাভ হলো না। লাভ তো লঞ্চ মালিকদেরই।

তবে লঞ্চচালক ও স্টাফরা বলেন, ভাড়া বাড়লেও খরচ পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। যদিও হিসাব বলছে, তেলের দাম বাড়ায় বড় লঞ্চ মালিকদের ব্যয় যতটা বেড়েছে ততটা বাড়েনি ছোট লঞ্চ মালিকদের। কিন্তু সেই হিসাবে দেড়শ যাত্রীর কাছাকাছি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন লঞ্চগুলোর লোকসানের থেকে লাভ বেশি হবে।

এদিকে আজ থেকে নতুন ভাড়ার হিসাবে ধরে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে থেকে ঢাকা নৌ-রুটের লঞ্চগুলো চলাচল করবে। যদিও বাসের চেয়ে নৌ-রুটের ভাড়া কিছুটা কম রয়েছে। তবে সময় স্বল্পতার কারণে যাত্রীর সংকট নিরসন এখনই হচ্ছে না বলে মনে করছেন লঞ্চ মালিকরা।

তারা বলছেন, সরকার যে নতুন ভাড়া সমন্বয় করেছে। তাতে লোকসানের শঙ্কা নেই। তবে যাত্রী না হলে লঞ্চগুলোর ব্যয় ওঠানোই কঠিন হবে। এক্ষেত্রে কেবিনের ভাড়া তেমনভাবে বাড়ানো হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সহ সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক পথের উন্নয়ন ঘটায় নৌপথে যাত্রী অনেক কমে গেছে। এখন মানুষ সড়ক পথে চলাচল করছে। এরপর এখন ‘মড়ার ওপর অনেকটা খাঁড়ার ঘা’র মতো অবস্থা হয়েছে। কারণ বিশ্ববাজার অর্থনীতির সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে সরকারকে বাধ্য হয়ে তেলের দাম বাড়াতে হয়েছে। তাতে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৩৪ টাকা বেড়েছে। এটা বাড়ার ফলে আমাদের খরচ সাড়ে ৪২ পার্সেন্ট বেড়ে গেছে। এটা নিয়ে কয়েকদিন ধরে নৌ-মন্ত্রী, সচিব বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। কয়েক দিন আগে মিটিং হয়েছে এবং আজ ডিক্লারেশনটা হয়েছে। আমাদের দাবি ছিল, ফুয়েলের খরচ যে সাড়ে ৪২ শতাংশ বেড়েছে, এটাই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। যাই হোক আমাদের নৌ-মন্ত্রণালয় দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছে। এটা দিয়েই আমাদের ভাড়া সমন্বয় করে চলতে হবে এবং এটা আজ থেকেই কার্যকর করা হবে।

সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, যখন তেলের দাম ৮০ টাকা লিটার ছিল। তখন ঢাকা বরিশাল রুটে আমাদের ভাড়া ছিল ৩৫২ টাকা। এখন ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় ৪৫৮ টাকা ভাড়া আসে কিন্তু আমরা ৪৫০ টাকা ভাড়া নেবো।

তিনি বলেন, আর কেবিনের ক্ষেত্রে আমাদের একটা সার্কুলার রয়েছে, যে ডেকের ভাড়ার চারগুণ পর্যন্ত আমরা ভাড়া বাড়াতে পারবো। সেক্ষেত্রে সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১৮শ টাকা গিয়ে দাঁড়াবে, এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া ৩৬শ টাকা হবে। তবে এতে মানুষের সমস্যা হয়ে যাবে। তাই আমরা মালিক সমিতি বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। সড়ক পথের ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদের বেঁচে থাকার তাগিদে আমরা সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিনের ভাড়া কিছু কমিয়ে নিয়ে ভাড়া নির্ধারণ করবো।

এদিকে ঢাকা-বরিশাল রুটের নিয়মিত যাত্রীরা বলছেন, যেখানে এসি বাসগুলো ৬শ’ থেকে হাজার টাকার মধ্যে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়া সম্ভব সেখানে লঞ্চের কেবিনে এতো টাকা খরচ করতে চাইবে না কেউ। এক্ষেত্রে কেবিনের ভাড়া হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে লঞ্চ মালিকদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২২
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।