ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ফটোশপ করে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অপপ্রচার চলছে: শিক্ষামন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
ফটোশপ করে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে অপপ্রচার চলছে: শিক্ষামন্ত্রী

ঢাকা: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী, যাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে কিন্তু তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমের বইগুলো পড়ানো হয় না, তারা ব্যাপকভাবে এই বইগুলো (পাঠ্যপুস্তক) নিয়ে অপপ্রচারে নেমেছেন।

তিনি বলেন, ভুলত্রুটি যা রয়েছে তা সংশোধন করা হচ্ছে।

কিন্তু যে বিষয় বইয়ে নেই, যে বিষয় যেভাবে নেই, যে কথা বইতে বলা হয়নি, যে ছবি আমার বইতে নেই; মিথ্যাচার করে, ফটোশপ করে, এডিট করে সেগুলো আমাদের বইয়ের অংশ বলে একটি শ্রেণি অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং অপপ্রচার চালাবার পাশাপাশি লেখক-শিক্ষক, যেসব শিক্ষাবিদ-বিশেষজ্ঞরা জড়িত ছিলেন, আমরা যারা মন্ত্রণালয়ে আছি, আমাদের কদর্য ভাষায়, কুৎসিতভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলেছে এবং হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তিনি।

সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ভারতের হিমাচল প্রদেশের শুলিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও উপাচার্য অধ্যাপক অতুল খোসলা। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য রাখেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা পাঠ্যবই নিয়ে কথা বলছেন তাদের উদ্দেশ্য যদি সৎ হতো, তাদের উদ্দেশ্য যদি হতো বইগুলো সংশোধন, তাহলে নিশ্চয় তারা মিথ্যার আশ্রয় নিতেন না, মিথ্যাচার করতেন না, কদর্য আচরণ করতেন না এবং আমাদের হুমকি দিতেন না। এরা কারা? এরাই তারা যারা পঞ্চাশের দশকে বলেছিল, নৌকায় ভোট দিলে বিবি তালাক হয়ে যাবে। এরাই তারা যারা ৯০ এর দশকে বলেছিল, নৌকায় ভোট দিলে ফেনী পর্যন্ত ভারতের অংশ হয়ে যাবে, মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি হবে। এর কোনোটিই কিন্তু ঘটেনি। এই একই অপশক্তি নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যেখানে বইতে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, মানুষ বানর থেকে হয়নি। সেখানে তারা বলছেন যে, আমরা নাকি বইতে বলেছি—বানর থেকে মানুষ হয়েছে। এই মিথ্যাচার, অপপ্রচার কেন? এবং আরও যা যা বলেছে তার প্রত্যেকটির জবাব আছে। কোনো ছবি, কনটেন্ট নিয়ে কারো আপত্তি থাকে, এমনকি অশ্বস্তি থাকলেও আমরা তা বিবেচনায় নেবো। যেভাবে কদর্য ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে করছেন, সকল ধর্ম কী বলে? সকল ধর্ম বলে সত্য কথা বলতে, সকল ধর্ম বলে এমনকি আমাদের ধর্মেও বলা হয়েছে, সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে মিশিও না। কিন্তু তারা মিথ্যাচার করছে, অপপ্রচার করছে, গুজব রটাচ্ছে।

যারা মন্দ কাজ করছে তাদের উদ্দেশ্য মন্দ, পথ মন্দ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা নিশ্চয় থেমে থাকবো না। ভালো কাজ যা করার তা করবো। আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে আনন্দের সঙ্গে শিখতে পারে, বয়স অনুযায়ী সঠিক জিনিস শিখতে পারে। তবে সমাজের যে বিষয়টি সংবেদনশীল সেটি বিবেচনায় নেবো, যেখানে সংশোধন করা দরকার সেটি সংশোধন করবো। মিথ্যাচার, অপপ্রচার দিয়ে আমাদের অগ্রযাত্রাকে নিশ্চয় বন্ধ করা যাবে না।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসব অপপ্রচারগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করবার আগে সত্যটা যাচাই করে নিন। বইগুলো ওয়েবসাইটে আছে, আপনার বাড়ির পাশে স্কুল আছে।

তিনি বলেন, নতুন এই কারিকুলামটি শুরু হলো যখন, তখন আমরা দেখলাম শিক্ষক, শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া। বইগুলোর মধ্যে ভুল থাকতে পারে। আমরা বলেছি— ভুল থাকলে চিহ্নিত হলে সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন হবে। আমরা যখনই ভুল পাচ্ছি তখনই সংশোধন করে দিচ্ছি। আমরা দুটো কমিটি করে দিয়েছি। একটি কমিটি বইয়ে ভুল থাকলে বলবে সেটি আমরা শুদ্ধ করে দেবো। আর ভালো পরামর্শ থাকলে দেবে, তারা যা কিছু যৌক্তিক বলে পরামর্শ দেবে আমরা তা গ্রহণ করবো। আরেকটি কমিটি করেছি, কারণ কেউ কেউ বলেছেন, এর মধ্যে চক্রান্ত আছে, ষড়যন্ত্র আছে। এগুলো তদন্ত করবার জন্য।

উচ্চশিক্ষা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করছি। আমাদের সনাতনী চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে নতুন চিন্তা করতে হবে। আমাদের মডিউলার এডুকেশনে যেতে হবে, বেন্ডেড লার্নিং চালু করতে হবে। আমাদের অনেক বেশি শর্ট কোর্স, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স দিতে হবে। জনসম্পদকে আপ-স্কিল করতে হবে, রি-স্কিল করতে হবে। বার বার এসে পুরোপুরি একটি ডিগ্রি করবার আর সুযোগ থাকবে না।

উচ্চশিক্ষায় গবেষণা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা গবেষণার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা গবেষণার জন্য অনেক বরাদ্দ দিচ্ছেন। আরও অনেক বরাদ্দ দেবেন। যত বেশি গবেষণা হবে তত বেশি বরাদ্দ তিনি দেবেন। গবেষণা শুধু গবেষণার স্বার্থেই নয়, গবেষণা করলাম, গবেষণাপত্রে ধুলো জমালো, তাহলে লাভ নেই। গবেষণা ও উদ্ভাবনকে ইনকিউবিশন ও কমার্শিয়ালাইজেশনে নিয়ে যেতে হবে। বাণিজ্যিকীকরণ পর্যন্ত যদি না যাওয়া যায়, তা যদি আমার শিল্পকে সহায়তা না করে, নতুন মান অর্জনের ক্ষেত্রে তাহলে সেই গবেষণার করে কোন লাভ নেই। আমি আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রিসার্চ, ইনোভেশন, ইনকিউবিশন, কমার্শিয়ালাইজেশন—এই পুরো পথটি বিবেচনায় রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৩
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।