ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন

ভাঙা পা নিয়েই ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসেন মাইশা

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫১ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
ভাঙা পা নিয়েই ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসেন মাইশা ছবি- মাহিউদ্দিন রিফাত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): দু’চোখভরা স্বপ্ন, সঙ্গে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি। দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের পর উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা।

ভাঙা পা নিয়েই ফার্মগেট থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসেন মাইশা আক্তার দোলা। স্বেচ্ছাসেবীদের কাঁধে ভর করেই পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকে পরীক্ষা দিলেন।

পরীক্ষাশেষে জানালেন স্বপ্নের কথা। বললেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার কারণে পায়ের হাঁড় ফেটে গেছে। তবে পরীক্ষা মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়েছে বলে খুশি হয়েছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনার ইচ্ছা রয়েছে।

জবিতে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন পৃথিবীর আলো দেখতে না পারা ফৌজিয়া আক্তার প্রাপ্তিও। শ্রুতিলেখক মো. সাব্বির ইসলামের সাহায্যে পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে পড়ালেখা করা এ শিক্ষার্থী বলেন, সরকার যদি উন্নত দেশের মতো ব্রেইল অথবা কম্পিউটারের সাহায্যে পরীক্ষা নিতো, তাহলে অনেক ভালো হতো। কেননা অন্যের সাহায্যে পরীক্ষা নিলে সর্বক্ষণই অনিশ্চয়তা কাজ করে। তার স্বপ্ন, তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে পড়ালেখা করবেন।

শুধু মাইশা বা প্রাপ্তিই নয়, প্রতিবন্ধকতাকে অগ্রাহ্য করে শনিবার (২০ মে) পরীক্ষা দিতে আসেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মাসুম শাহরিয়ার। দুই হাত নেই তার। তবুও এই প্রতিবন্ধকতা আটকাতে পারেনি তাকে। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে স্বপ্ন দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের। তাইতো শ্রুতি লেখকের সাহায্যে পরীক্ষা দিলেন তিনিও।

উদ্যমী এই শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিবন্ধকতা থাকলেও বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। পরীক্ষা ভালো হয়েছে। আশাকরি, ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবো। পড়াশোনা শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করতে চাই।

শনিবার (২০ মে) মানবিক বিভাগের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে গুচ্ছভুক্ত দেশের ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা।

এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের 'বি' ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১২ হাজার ৮৪৫ শিক্ষার্থী। এরমধ্যে, প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই এই পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হন এ তিনজন। শারীরিকভাবে অসুস্থ এসব শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ছিল বিশেষ ব্যবস্থা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিতা শবনম বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে বিশেষভাবে সক্ষম তিন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় তাদের আবেদনে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সমন্বিত ভর্তি কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, আমরা সবাইকে সমানভাবে সুযোগ দিতে চাই। যেহেতু তারা জাতীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পাস করে এসেছে, তারা যোগ্য প্রার্থী। তারা প্রতিবন্ধী, তাদেরও তো আমাদের সুযোগ দিতে হবে। সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করার দরকার আমরা করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৩
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।