ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

কলকাতা টু ঢাকা

কলকাতার প্রতি সংহতি জানিয়ে ঢাকার রাজপথে নারীরা 

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২৪
কলকাতার প্রতি সংহতি জানিয়ে ঢাকার রাজপথে নারীরা 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আর জে হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় কলকাতার নারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের নারীরা ঢাকার রাজপথে নেমেছেন।  

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাত ১০টায় ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে তারা জড়ো হয়ে একটি সমাবেশ করেছেন।

এ সময় সম্প্রতি বাংলাদেশের সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে নিহত শিক্ষার্থী, চিকিৎসক মৌমিতাকে হত্যা ও ধর্ষণ এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্ষণের শিকার নারীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।  

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবন চত্বর থেকে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যে আসেন তারা।  

সমাবেশ নারীরা বলেন, ৫৪ বছর ধরে যে বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে, তা নারীবান্ধব নয়। আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সব কাঠামোই পিতৃতান্ত্রের শিকার। এদেশে যত ধর্ষণ হয়েছে, আমরা তার সুষ্ঠু বিচার চাই। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও তালবাহানার কারণে বাংলাদেশে বেশ কিছু ঘটনার বিচার হয়নি।  

সমাবেশে অংশ নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এস মুরশিদ। রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে উপস্থিত নারীদের কাছে একটি প্রস্তাব চান তিনি।  

মুরশিদ বলেন, তোমরা যদি রাস্তায় থাকো, তাহলে আমিও রাস্তায়। তোমরা যদি অনিরাপদ হও, তাহলে নিরাপত্তাহীনতা কীভাবে দূর করব, তা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। যে সরকার হয়েছে, তা তোমাদের সরকার। আমি তোমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই।  

শিক্ষার্থী রূপসী চাকমা বলেন, বাংলাদেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি রয়েছে, তার কারণে আমরা কোনো বিচার পাইনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিলাইছড়িতে নিজ বাড়িতে দুই মারমা তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। সে বিচার চাইতে গিয়েও আমরা পাইনি। ২৮ বছর পেরিয়েও কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচার আমরা পাইনি।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আনিয়া ফাহমিন বলেন, আর জে কর হাসপাতালের মতো ঘটনা আমাদের দেশে বহু বছর ধরে ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী শিক্ষার্থী যৌন নির্যাতনের শিকার হলে তার বিচার চাইতে গিয়েও হয়রানির স্বীকার হতে হয়। নারী শিক্ষার্থীদের রাত ১০টার মধ্যে হলে প্রবেশের এক সামন্ত্রতান্ত্রিক প্রথা চালু রয়েছে। আমাদের এসব সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।  

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক তানিয়া মাহমুদা তিন্নি বলেন, ৫৪ বছর ধরে যে বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে, তা নারীবান্ধব নয়। কোনো প্রতিষ্ঠান নারীবান্ধব নয়।  

সমাবেশে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নুজিয়া হাসিন রাশার সঞ্চালনায় একটি অবস্থানপত্র পাঠ করেন শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান। অবস্থানপত্রে তিনি ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন।  

দাবিগুলো হলো- তনু মুনিয়াসহ প্রতিটি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি করতে হবে। ধর্ম, গোত্র, বর্ণের ঊর্ধ্বে গিয়ে প্রতিটি লিঙ্গের মানুষের সম্পত্তিতে সমানাধিকার দিতে হবে। ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড চালু এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।  

সন্তানের অভিভাবকত্ব আইন পরিবর্তন করতে হবে। নারীকে সন্তানের অভিভাবকত্ব দিতে হবে। ২০০৯ সালের হাইকোর্ট নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি ও সেল তৈরি এবং কার্যকর করতে হবে। নারী, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী এবং ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষের প্রতিনিধিত্বের জন্য যৌক্তিক অনুপাতে কোটা বরাদ্দ দিতে হবে। ১৮৬০ সালে গর্ভপাতের আইন বাতিল করতে হবে। নারীকে গর্ভপাতের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।  

নারী ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যের মানুষের জন্য সমান কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে হবে এবং নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষের রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্রে তার লৈঙ্গিক পরিচয়ের স্বীকৃতি দিতে হবে। সব প্রকার লৈঙ্গিক বৈষম্যকারী আইন বাতিল করতে হবে। বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে হবে। আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে রাষ্ট্রীয় সব পর্যায়ে নারীর ৩৩ শতাংশ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২৪
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।