ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

শিক্ষা

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম সুশোভন, জানালেন দেশসেরা হওয়ার পেছনের গল্প 

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম সুশোভন, জানালেন দেশসেরা হওয়ার পেছনের গল্প  মা-বাবার সঙ্গে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম সুশোভন বাছাড়

খুলনা: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জাতীয় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সুশোভন বাছাড়। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৯০ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে শীর্ষস্থান অর্জন করেছেন তিনি।

সুশোভন বাছাড়ের বাড়ি খুলনা মহানগরীর আজিজের মোড় এলাকায়। গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। তার বাবা সুভাষ চন্দ্র বাছাড় খুলনার টি অ্যান্ড টি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক। মা বন্দনা সেন একজন গৃহিণী। সুভাস চন্দ্র ও বন্দনা সেন দম্পতির একমাত্র সন্তান সুশোভন। সুশোভন টি অ্যান্ড টি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাস করেন।

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় দেশের সেরা হওয়ায় অভিনন্দনের বন্যায় ভাসছে অদম্য মেধাবী সুশোভন বাছারের পুরো পরিবার।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাতে মহানগরীর বয়রা এলাকায় বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুশোভন তুলে ধরেন তার সাফল্যের পেছনের গল্প।  

দেশসেরা হওয়ার পেছনে কাদের অবদান ছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে সুশোভন বলেন, সর্বপ্রথম আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ। তার করুণা ছাড়া আসলে কিছু হয় না। তারপর আমার বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, বন্ধু-বান্ধব আরও যারা শুভানুধ্যায়ী আছেন তাদের আশীর্বাদে আমি এখানে পৌঁছাতে পেরেছি। তারা সব সময় অনুপ্রেরণা দিতেন। যার কারণে আমি সফলতার দ্বারে পৌঁছাতে পেরেছি। আমি দেশের সব মানুষের কাছে দোয়া ও আশীর্বাদ প্রার্থী, যাতে আমার একজন চিকিৎসক হওয়ার পথ মসৃণ হয়। আমি একজন ভালো ডাক্তার হতে চাই। ভালো মানুষ হিসেবে এদেশটা গড়ার কাজে অবদান রাখতে পারি।   

কত সময় পড়তেন জানতে চাইলে সুশোভন বাছাড় বলেন, আমি ঘণ্টা মেপে পড়তাম না। মূলত একটা টার্গেট নিয়ে পড়তাম। যেমন এই টপিকগুলো এই দিন বা সময়ের মধ্যে শেষ করবো। সেই অনুপাতে আমি পড়া সাজিয়ে নিতাম। কারণ ঘণ্টা মেপে পড়ে আসলে কিছু হয় না। সময় মেনটেইন করে টপিক নির্ধারণ করে পড়াটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

নতুন শিক্ষার্থী যারা আগামীতে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেবে তাদের কি পরামর্শ দেবেন এমন প্রশ্নে সুশোভন বাছাড় বলেন, সৎভাবে পরিশ্রম করে যেতে হবে। মনোবল ভাঙা যাবে না। সাধারণত পরীক্ষা খারাপ হতে পারে। তারপরও নিজের মধ্যে বিশ্বাস রাখতে হবে আমাকে দিয়েও হবে। সবচেয়ে বড় কথা ভর্তি পরীক্ষার হলে বা পরীক্ষার সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মাথা ঠান্ডা না রাখার কারণে চান্সটা মিস করে ফেলেন।

আপনার সাফল্যের জন্য প্রথম কাকে বেশি কৃতিত্ব দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম সৃষ্টিকর্তা তারপর বাবা-মা। কেননা তারা সব সময় আমার সঙ্গে ছিলেন। তারাই সবচেয়ে ভালো বন্ধুর মতো আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণ জুগিয়েছেন। যার কারণে কখনো মনে হয়নি আমি কোনো ডিপ্রেশনে আছি।

ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন কিনা জানতে চাইলে দেশসেরা সুশোভন বলেন, হ্যাঁ, ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কেননা আমার ডাক্তারদের ভালো লাগতো। তাদের সাদা অ্যাপ্রোন, তাদের কার্যকলাপ আমার ভালো লাগতো। তারা যেভাবে অসুস্থ ও মৃতপ্রায় মানুষকে বাঁচিয়ে তোলেন এই জিনিসটা আমার ভালো লাগতো। আমি চাইতাম তাদের দলে যাতে যেতে পারি। এমন আশা নিয়েই আমি ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করে গেছি।  

ভবিষ্যতে কী হতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নিউরোলজি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে। আর গরিব ও দুস্থদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা আছে।

বিগত দিনের ফলাফল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি পিএসসিতে সরকারি টি অ্যান্ড টি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পেয়েছি। জেএসসিতে বৃত্তি পেয়েছি। এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। এইচএসসি পরীক্ষাতে খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি।

ছেলের সফলতার বিষয়ে বাবা সুভাষ চন্দ্র বাছাড় বলেন, আমার ছেলে যে এ পর্যন্ত আসছে সব সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়। আমি মনে করি আমার ছেলের পরিশ্রম এবং আমরা যখন যা বলেছি সেটা শুনেছে এবং মেনে চলেছে তারই ফলাফল এটা।

ছেলে দেশসেরা হওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মা বন্দনা সেন বলেন, আমার ছেলে জাতীয় মেধায় প্রথম হয়েছে শুনে প্রথমে আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। পরে আমার চোখে জল চলে আসে। এর চেয়ে আনন্দের কি হতে পারে একজন মায়ের জন্য। আমার ছেলের জন্য আমি একটি স্কুলের শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আজ তার ফল পেয়েছি।

এর আগে রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। পাসের হার ৪৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।

জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষার পাস নম্বর ৪০। অংশগ্রহণকারী ১ লাখ ৩১ হাজার ৭২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মোট ৬০ হাজার ৯৫ জন ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পাসের হার ৪৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।

এর মধ্যে ছেলে পরীক্ষার্থী ছিল ২২ হাজার ১৫৯ জন, যা উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর ৩৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। উত্তীর্ণ মেয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ৯৩৬ জন, যা উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত সর্বোচ্চ নম্বর ৯০ দশমিক ৭৫।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
এমআরএম/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।