ঢাকা: তিন দফা দাবিতে ঢাকার কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে গণ-অনশনে বসেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। আজ শুক্রবার (১৬ মে) বিকেল ৪টা থেকে অনশন শুরু করেন তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ডিন মঞ্জুর মোর্শেদ বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে গণ–অনশন শুরুর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে আমাদের গণ–অনশন শুরু। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের গণ–অনশন কর্মসূচি চলবে। ’
ঘোষণার পর ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেন। কর্মসূচিতে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান, কবিতা ও স্লোগানে কাকরাইল মোড় মাতিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। জবির সাবেক শিক্ষার্থীরাও যোগ দিয়েছেন এই আন্দোলনে।
এ সময় তারা বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করেন- ‘এক দুই তিন চার, হল আমার অধিকার’, ‘রক্ত লাগলে রক্ত নে, হল আমার অধিকার’, ‘জবিয়ান আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘বৈষম্যের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘যে হাত ছাত্র মারে, সে হাত ভেঙে দাও’, ‘ভুজুংভাজুং বুঝি না, আইসা পড়ছি যমুনা’, ‘সিন্ডিকেটের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘বিপ্লবে বলীয়ান, নির্ভীক জবিয়ান’ ইত্যাদি। এছাড়া জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন গান-কবিতাও পরিবেশন করতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইস উদ্দীন ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহতাব লিমন বলেন, আমাদের আন্দোলন এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে আমাদের আর পেছনে ফেরার জায়গা নেই। বিজয় না নিয়ে আমরা ফিরছি না।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে সাবেক ছাত্রদল নেতারাও।
শুক্রবার (১৬ মে) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে অনশন কর্মসূচিতে থাকা জবি ছাত্রদের মাঝে এসে এই সংহতি জানান ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন ও জাবি ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদ।
তারা বলেন, 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যে দাবি তা খুবই যৌক্তিক। দীর্ঘদিন ধরে তারা এই সংকট নিরসনে দাবি জানিয়ে আসছে। আমরা তাদের দাবির সঙ্গে একমত। সরকারকে বলবো দ্রুত এই জাবির শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিন। '
জবির শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো — জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনবৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।
এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দাবি আদায়ে কাকরাইল মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণে সমাবেশ শুরু হয়। শুক্রবার জুমার নামাজের পর দুপুর সোয়া ২টার দিকে এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন বিভাগের অ্যালামনাইরাও।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর আমির শাহীন আহমেদ খান। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দ্রুত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। নয়তো সাবেক-বর্তমান সব শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আরও জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন।
প্রসঙ্গত, তিন দফা দাবি আদায়ে গত ১৩ মে দুপুরে দাবি আদায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি দল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসিতে যায়। কিন্তু সেখান থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ১৪ মে ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন ‘লং মার্চ টু যমুনা’ মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের ক্রসিং মোড় এলেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটে। এসময় পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন অনেকে। এরপর থেকে কাকরাইল মোড় আটকে চলছে জবির শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি। যে কারণে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী।
এমএমআই/এসএএইচ