ঢাকা, শুক্রবার, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২২ মহররম ১৪৪৭

শিক্ষা

সোহাগ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা তদন্ত হওয়া উচিত: সাবেক আইজিপি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৪৯, জুলাই ১৮, ২০২৫
সোহাগ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা তদন্ত হওয়া উচিত: সাবেক আইজিপি এফডিসিতে ‘মব সন্ত্রাস প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক ছায়া সংসদে

ঢাকা: সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা বলেছেন, সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। শহরের মাঝে ঘটনা ঘটে যাওয়ার দুইদিন পর ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের তৎপর হওয়াটা দুঃখজনক।

এখানে পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকলে তারও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।

শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর এফডিসিতে ‘মব সন্ত্রাস প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা বলেন, মব ভায়োলেন্স শুধু ভুক্তভোগীরাই করে না; নৈরাজ্য সৃষ্টি ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য কেউ কেউ টার্গেট করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর উদ্দেশ্যে এ ধরনের মব ভায়োলেন্স করছে।

তিনি আরও বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর থাকলে গোপালগঞ্জে এত বড় ঘটনা ঘটত না। গোয়েন্দা ব্যর্থতাই গোপালগঞ্জের ঘটনার জন্য দায়ী। ‘জুলাই চেতনা’ নস্যাৎ করে পতিত প্রধানমন্ত্রীকে পুনর্বাসন করার জন্য চক্রান্ত চলছে, যাতে নির্বাচন পেছানো যায়। গোপালগঞ্জের ঘটনা তারই উদাহরণ। পুলিশের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ না করে তাদের যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে দিলে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মব সন্ত্রাস জাতীয় জীবনে এক নতুন আপদ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। দেশটি মবের মুল্লুকে পরিণত হচ্ছে। সমাজের ক্যান্সার হলো মব সন্ত্রাস। মব কালচার গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে কলঙ্কিত করছে। এটি বন্ধ করা না গেলে জনজীবনে আতঙ্ক বাড়বে। অফিস-আদালত, রাস্তা-ঘাট, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, ট্রেন স্টেশন-সর্বত্র ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জাতি হিসেবে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। মবের উৎপাত বাড়তে থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ভয় পাবে, দেশীয় বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হবে।

তিনি বলেন, আজকের মব নিয়ে যে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা, তা অতীতের ধারাবাহিকতা বললে ভুল হবে না। ১/১১-র সময় লগি-বৈঠা দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে মানুষ হত্যার মাধ্যমে মবের বীজ রোপিত হয়েছিল। সেদিন রাজধানীর পল্টনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল, যার বিচার আজও হয়নি। আমরা বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে সংঘটিত সকল মব সন্ত্রাসের যেমন বিরোধিতা করেছি, তেমনি ‘জুলাই বিপ্লব’-এর পর ঘটে যাওয়া চাঁদাবাজি, দখলবাজি, লুটপাটের উদ্দেশ্যে সংগঠিত নতুন মবগুলোকেও প্রত্যাখ্যান করি।

চোর-ডাকাত, ছিনতাইকারীর পাশাপাশি মবের শিকার হচ্ছেন রাজনীতিবিদ, আমলা, আইনজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক থেকে শুরু করে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সর্বত্র ‘মব জাস্টিস’-এর নামে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। মাজার ভাঙা, বাউল গান বন্ধ করা, জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তোলা-এসব কিছুই কাম্য নয়। মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা বৃথা যাবে।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা মব সন্ত্রাস বৃদ্ধির প্রধান কারণ’ শীর্ষক ছায়া সংসদে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক সাইদুর রহমান, সাংবাদিক আহমেদ সরওয়ার, সাংবাদিক এম এম বাদশাহ ও সাংবাদিক মনিরুজ্জামান মিশন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

এমএমআই/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।