ঢাকা, সোমবার, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিক্ষা

ডাকসু নির্বাচন

ডাকসুর ফলে গড়মিল, ইসি বলছে ‘যোগবিভ্রাট’

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৪০, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫
ডাকসুর ফলে গড়মিল, ইসি বলছে ‘যোগবিভ্রাট’ ডাকসু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীর কেন্দ্রীয় ফলাফলের সঙ্গে হলভিত্তিক যোগফলের গড়মিল দেখা গেছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে তারা যে পরিমাণ ভোট পেয়েছেন, হলের ফলাফল আলাদা যোগ করলে তার থেকে কম বা বেশি হচ্ছে।

রোববার প্রকাশিত ১৮টি হলের ফলাফল যোগ করে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ফলাফলে অন্তত নয়জনের ভোট বেশি দেখানো হয়েছে এবং নয়জনের ভোট কম দেখানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় এবং হলভিত্তিক ফলাফলে এমন গড়মিলের কারণে প্রার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কার কথাও বলছেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিকে যোগবিভ্রাট বলে অভিহিত করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষিত ও প্রকাশিত ফলাফল চূড়ান্ত ও অপরিবর্তিত আছে। তবে বিরতিহীন কাজের ফলে মানবীয় অবসাদের কারণে যোগবিভ্রাট ঘটেছে।

৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গ্রহণের পরদিন সকালে কেন্দ্রীয়ভাবে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ফলাফল প্রকাশ ঘোষণা করা হয়। এতে সহ-সভাপতি হিসেবে সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক পদে এস এম ফরহাদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মহিউদ্দীন খানসহ ২৬টি পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।

যাদের ভোট কম দেখানো হয়েছে
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে বিজয়ী আসিফ আব্দুল্লাহর প্রকৃত ভোট ৯ হাজার ১০১ হলেও ফলাফলে ৪০ ভোট কমিয়ে ৯০৬১ ভোট দেখানো হয়েছে।

একই পদে মো. আসিফ জারদারীর ভোট ২০৫০ হলেও ফলাফলে ২ হাজার দেখানো হয়েছে। ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে নির্বাচিত মাজহারুল ইসলামের ৫০০ ভোট কম দেখানো হয়েছে, তার প্রকৃত ভোট ৯৮৪৪ হলেও ফলাফলে ৯৩৪৪ ভোট উল্লেখ করা হয়েছে।

ক্রীড়া সম্পাদক পদে ছাত্রদলের প্যানেলের চিম চিম্যা চাকমার ভোট ৩ হাজার ৮৮৮ হলেও প্রকাশিত ফলাফলে ১০০ ভোট কমিয়ে ৩ হাজার ৭৮৮ দেওয়া হয়েছে।
সদস্য পদে সর্বমিত্র চাকমার ভোট ৯৫৪৮ হলেও ফলাফলে ৫৬০ ভোট কমিয়ে ৮৯৮৮ দেখানো হয়েছে। সদস্য পদে আবিদ আব্দুল্লাহর ২৪২৩ ভোট ৪০টি কমিয়ে ২৩৮৩ দেখানো হয়েছে।

সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে মো. লানজু খানের প্রকৃত ভোট ১৫৭১ হলেও ফলাফলে ১৫৩১ দেখানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ সাকিবের ৩৯৬২ ভোটকে কমিয়ে ৩৯২২ দেখানো হয়েছে এবং একই পদে আতাউর রহমান অপুর ভোট তিনটি কমিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি ৫৯৮ ভোট পেলেও দেখানো হয়েছে ৫৯৫ ভোট।

যাদের ভোট বেশি দেখানো হয়েছে
সহ-সভাপতি পদে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মোট ৬টি ভোট পেলেও ৮টি ভোট দেখানো হয়েছে। সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে আশরেফা খাতুন প্রকৃতপক্ষে ৮৯০ ভোট পেলেও ফলাফলে ৯০০ ভোট দেখানো হয়েছে।

সমাজসেবা সম্পাদক পদে তাওহিদুল ইসলামের এক ভোট বেশি দেখিয়ে ২০৪৪ ভোটকে ২০৪৫ হিসেবে গণনা করা হয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ফাতিন ইশরাকের প্রকৃত ভোট ২০১১, তবে ১০ ভোট বাড়িয়ে ২০২১ ভোট উল্লেখ করা হয়েছে। একই পদে ফারহান লাবিবের ভোট ৪৮৬ হলেও ৪০ ভোট বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে ৫২৬।

ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে মাহাথির খান নিনাদ ও মো. রায়হানের ভোট যথাক্রমে ৬৯৪ ও ৩০৫ হলেও ১০টি করে বাড়িয়ে ফলাফলে ৭০৪ ও ৩১৫ দেখানো হয়েছে।
সদস্য পদে আবির হাসানের ভোট ৩২২৬ হলেও দেখানো হয়েছে ৩৩২৬। মনির হোসেনের প্রকৃত ভোট ৫৪৬ হলেও ৫৮২ উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে প্রার্থীরা সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে লানজু খান ফেসবুকে পোস্টে ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলে আমার ভোট ১৫৩১টি হলেও প্রতিটি হলের ভোট গণনা করে আমার ভোট আসলো ১৫৭১টি। ধন্যবাদ ঢাবি প্রশাসনকে। আপনাদের চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি।  

আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে সাকিব ফেসবুকে লিখেছেন, শিক্ষার্থীদের রায়কে সম্মান জানিয়ে যে কয়জন নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে আমি তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলাম। একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যর্থতাকে আমি দালিলিক প্রমাণ হিসেবে রাখলাম।  

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষিত ও প্রকাশিত ফলাফল চূড়ান্ত ও অপরিবর্তিত আছে। ৮টি কেন্দ্রের ভোট যোগ করে ডাকসুর সমন্বিত ফলাফল তৈরির সময় দীর্ঘ বিরতিহীন কর্মসম্পাদনজনিত মানবীয় অবসাদের কারণে সামান্য কয়েকটি ক্ষেত্রে যোগবিভ্রাট ঘটে।  

তিনি বলেন, এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ইতোমধ্যে প্রকাশিত কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের ভিত্তিতে ডাকসুর সমন্বিত ফলাফল সংশোধিত হয়েছে। এই সংশোধনীর কারণে নির্বাচিতদের তালিকায় কোনো পরিবর্তন হয়নি।  

এফএইচ/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।