ঢাকার সাতটি কলেজকে কেন্দ্র করে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ খসড়া অধ্যাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধরন, শিক্ষাক্রম এবং সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এই খসড়া অধ্যাদেশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো ও পাঠদান পদ্ধতি নির্ধারিত হবে।
খসড়া অধ্যাদেশে বলা হয়, উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা, বিশেষ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক জ্ঞানচর্চা, পঠন-পাঠনের সুযোগ সম্প্রসারণ ও ঢাকা মহানগরের সরকারি সাতটি কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নীতরণ প্রয়োজন। সাতটি কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত পৃথকীকরণ করে ঢাকা জেলায় ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নামে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা সমীচীন ও প্রয়োজন।
সাত কলেজের অবকাঠামো ও ক্যাম্পাস স্থায়ীভাবে দিনের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি অ্যাকাডেমিক ক্যাম্পাস থাকবে। সাতটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচালিত হবে। যেমন- ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি, তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষার্থী-শিক্ষক কেন্দ্র, অডিটোরিয়াম, স্বাস্থ্যকেন্দ্র একটি স্বতন্ত্র স্থান থেকে পরিচালিত হবে। নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কোর্স প্রণয়ন ও পরিচালনা করা হবে। নতুন ধরনের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫-৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে আর ৬০ শতাংশ ক্লাস হবে সশরীর। তবে সব পরীক্ষা সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সব শিক্ষার্থী প্রথম চারটি সেমিস্টার (দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত) নন-মেজর কোর্সে অধ্যয়ন করবেন। পরবর্তী চারটি সেমিস্টার ডিসিপ্লিন অনুযায়ী মেজর কোর্সে অধ্যয়নে করবেন। তবে পঞ্চম সেমিস্টারে (তৃতীয় বর্ষের শুরুতে) শর্তপূরণ সাপেক্ষে শিক্ষার্থী ইচ্ছা অনুযায়ী ডিসিপ্লিন পরিবর্তন করতে পারবেন। কিন্তু ক্যাম্পাস পরিবর্তন করতে পারবেন না।
অ্যাকাডেমিক কাঠামো/কোন কলেজে কোন বিভাগ
খসড়া অধ্যাদেশে বলা হয়, সাতটি কলেজ ক্যাম্পাসকে চারটি স্কুলে বিভক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, স্কুল অব বিজনেস স্টাডিজ, স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিস-এ বিভক্ত করে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালতি হবে।
স্কুল অব সাইসেন্স: স্কুলটি ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস, ইডেন মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে। ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে অ্যাপ্লাইড ম্যথেমেটিক্স, জুলোজি, ড্যাটা সায়েন্স, বায়োকেমিস্ট্রি ও বায়োটেকনোলজি ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে। ইডেন মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে ফিজিক্স, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি, বোটানি, ফরেনসিক সাইন্স ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে। বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসে সাইকোলজি, এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ: স্কুলটি সরকারি বাঙলা কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে। এই ক্যাম্পাসে জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন স্টাডিজ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ইকোনোমিকস, ফিল্ম স্টাডিজ, ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
স্কুল অব বিজনেস: স্কুলটি সরকারি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে। ক্যাম্পাসে অ্যাকাউন্টিং, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, হোটেল অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস, ব্যাংক অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
স্কুল অব ল অ্যান্ড জাস্টিস: স্কুলটি কবি নজরুল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে। কবি নজরুল সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ল ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে। সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাসে ক্রিমিনোলজি ডিসিপ্লিন চালু করা যাবে।
এমআইএইচ/এমজে