ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার ফল দেখে চমকে উঠেছে মানুষ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪
ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার ফল দেখে চমকে উঠেছে মানুষ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া সেন্টার থেকে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল দেখে দেশের মানুষ চমকে উঠেছে বলে জানালেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক এবং দেশের অন্যতম প্রধান জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন।

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সানের আয়োজনে ‘পাশের হার বৃদ্ধি: শিক্ষার মানের হ্রাস-বৃদ্ধি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা করতে গিয়ে এ কথা বলেন ইমদাদুল হক মিলন।



রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া সেন্টারে শনিবার আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠকে  সভাপতিত্ব করছেন ডেইলি সানের সম্পাদক আমীর হোসাইন।   এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

ইমদাদুল হক মিলন বলেন, পাশের হার বেড়েছে ব্যাপকভাবে। কিন্তু মান কতটুকু বেড়েছে সেটাই এই আলোচনার বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়র ভর্তি পরীক্ষা দেখে চমকে উঠেছে মানুষ। ইংরেজি বিভাগে দুজন মাত্র চান্স পেয়েছে।

দেশের জনপ্রিয় দৈনিক বাংলাদেশে প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, নিয়োগ দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নিয়োগপ্রার্থীরা ভাল ইংরেজি অনুবাদ করতে পারছে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে আসার পরও তারা ভাল ইংরেজি পারছে না। আমি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট।

মাদ্রাসা শিক্ষা এখনো মূল ধারার শিক্ষার সাথে এক হতে পারছে না। মাদ্রাসায় এখনো জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হচ্ছে না। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। মূল শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার পরিবর্তন যদি না আনা হয় ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হবে।

ইংরেজি শিক্ষা মাধ্যমের জন্য এখনো নীতিমালা হয়নি। প্রচুর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে সেটা ইতিবাচক। কিন্তু মান রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক প্রফেসর ড. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শিক্ষায় পাশের হার বাড়া অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে কি না সেটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। পাশের হার বাড়বে কারণ, সমাজের সর্বস্তর থেকেই শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তাছাড়া পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে পাশের হার বাড়ছে। কারণ পরীক্ষার ট্রাডিশনাল পদ্ধতি ভেঙে এখন ভিন্ন একটি পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করছে।

সময়ের সাথে শিক্ষার মানের বিষয়টিও পরিবর্তন হয়েছে। সেভাবেই আমাদের বিবেচনা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু আমাদের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতিগত সমস্যা আছে। প্রশ্নের ‘পারসেপশান’ ঠিক হয়নি। প্রশ্নের মান ভাল হয়নি।

শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হলে উপযুক্ত শিক্ষক দরকার। আমরা কি সে জায়গাটি নিশ্চিত করতে পারছি? এই জেনারেশনকে হীনমন্য করা হয়েছে যে, ‘তোমরা কিছু পার না। তরুণ প্রজন্মের মেধা মনন আমাদের চেয়ে ভাল। এই মেধা মনন কিভাবে আমরা কাজে লাগাতে পারি সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কথা আমাদের ভাবতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ‘টিচার ইজ দ্যা বেস্ট কারিকুলাম’। শিক্ষকতা করার জন্য কেউ শিক্ষক হচ্ছে না, চাকরি করার জন্য শিক্ষক হচ্ছেন অধিকাংশ শিক্ষক। ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় বিপর্যয়ের দায় আমাদের। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী যেন হতাশ না হন। মনে রাখতে হবে তারা ভর্তি হওয়ার যোগ্য আমরা তাদের ফেল করিয়েছি। ’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক হায়াত মাহমুদ বলেন, আমাদের স্কুলের লেখাপড়ার মান খুবই খারাপ। এমএ পাশ করলেই শিক্ষক হওয়া যায়। মাস্টারি আসলে ডাক্তারি পেশার মতোই। কিভাবে পড়ালে পড়াশোনাটা কাজে লাগবে সেটা নির্ভর করে মাস্টারের উপর। ভাষা শেখাটাও অভ্যাসগত ব্যাপার। স্কুলে যদি প্রমিত বাংলা ব্যবহার করা না হয়, শেখানো না হয় তাহলে শিখবে কোথায়? ভাষার বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে, শিক্ষকদেরও। ভাষা নিরন্তর চর্চার বিষয়। আর যারা ভাষাটা শেখাবেন তাদেরও একটু বাছাই করে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিজের করে নিতে হবে।

নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শামসুল হক বলেন, গ্রেডিং পদ্ধতি ব্রিটিশ পদ্ধতি। গ্রেডিং পদ্ধতিতে সাবজেক্টিভিটি নেই। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার মান কতটুকু বাড়াতে পারে তার জন্য একটি বিশ্লেষণ হতে পারে।

পঞ্চম শ্রেণি থেকে এখন পাশ করার প্রতিযোগিতা। ভাল করার প্রতিযোগিতা। এতে শিক্ষার আনন্দ হারিয়ে যাচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণিতেই পাবলিক পরীক্ষা হলেই মান বাড়বে সেটা ঠিক না। বরং বিষয়টি শিক্ষার আনন্দকে ম্লান করে দিচ্ছে।

শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। পরীক্ষা ব্যবস্থারও বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। সেটা বোর্ডভিত্তিক হতে পারে। প্রশ্ন আলাদাও হতে পারে।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী।

 বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪/১৩৪১ ঘণ্টা-আপডেটেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।