ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বাংলানিউজকে শিক্ষাসচিব

দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৪
দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস

ঢাকা: শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের চাহিদাযোগ্য করে তোলা, শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে আরো বেশি মনোযোগী করাসহ শিক্ষার মানোন্নয়নে নানা পরিকল্পনা নিয়েছেন নতুন শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান।

গত ২১ সেপ্টেম্বর নজরুল ইসলাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে যোগদান করেন।

এর আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন তিনি।

কর্মতৎপর, সৃজনশীল ও আইটির প্রতি অনুরাগী নজরুল ইসলাম তার সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাজ করতে চান।

এর আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করা নজরুল ইসলাম বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তার বিভিন্ন কর্মউদ্যোগের কথা জানিয়েছেন।

তার সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো-

বাংলানিউজ: প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা নোটবুক-ল্যাপটপ নিয়ে স্কুলে যাবে, এ বিষয়ে কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?

নজরুল ইসলাম: ভবিষ্যতে যাতে শিক্ষার্থীরা নোটবুক-ল্যাপটপ নিয়ে স্কুলে যেতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছি। প্রাথমিকে ব্র্যাকের সঙ্গে যৌথভাবে মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেওয়ার জন্য বই প্রস্তুত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সব ক্লাসরুম হবে মাল্টিমিডিয়া। এজন্য একটি প্রকল্পের চিন্তা করছি।

বাংলানিউজ: এক্ষেত্রে কার সহযোগিতা নেবেন?

নজরুল ইসলাম: আন্তর্জাতিক সংস্থা-প্রতিষ্ঠান, যারা টাকা দেবে তাদের টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবো। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব বই মাল্টিমিডিয়ায় রূপান্তর করবো। সে লক্ষ্যে কাজ করছি। দাতা খোঁজা হচ্ছে। প্রস্তাব নিয়ে বিশ্বব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), চীনের সঙ্গে কথা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সে অনুযায়ী প্রত্যেক বছরে ষষ্ঠ শ্রেণিতে সব ছেলে-মেয়ের হাতে যদি ট্যাব তুলে দিতে পারতাম, তাহলে পাঁচ বছরে কমপ্লিট হতো। প্রাথমিকেও তাই হবে।

বাংলানিউজ: প্রান্তিক পর্যায়ের স্কুলের জন্য কী করবেন?

নজরুল ইসলাম: এর সঙ্গে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। প্রত্যেক স্কুলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। স্কুলগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে কাজ করছিলাম। আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে যাচ্ছি। ইউনিয়ন থেকে স্কুল-বাজার সব জায়গায় সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছি।

বর্তমানে যে ২৫ হাজার স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম তা আমার কনসেপ্ট। একশ’ ঘণ্টায় যে পড়া হবে না, মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাসরুমে ছবি দেখে পড়লে তা এক ঘণ্টায় বোঝা যায়।

বাংলানিউজ: পরীক্ষায় পাস নম্বর বাড়ানোর পরিকল্পনা কেন?

নজরুল ইসলাম: পৃথিবীর কোনো দেশে পাস নম্বর ৩৩ নেই। সবার মতামত নিয়ে পর্যায়ক্রমে পাস নম্বর বাড়ানো হবে। তবে হঠাৎ করে পাস নম্বর ৪০ করা হবে না। হঠাৎ করে ৪০ করলে ফল খারাপ হতে পারে। গ্রাজুয়ালি করতে হবে।

কীভাবে কয় বছরে করা যায় তা ভাবছি। টুডে অর টুমরো করতেই হবে। শিক্ষা পরিবারের সবাইকে নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করবো। পরীক্ষায় পাস নম্বর বাড়ালে শিক্ষার স্ট্যান্ডার্ড আরো বাড়বে।

এছাড়াও স্ট্যান্ডার্ড বাড়ানোর আরো উপায় আছে। রিডিং, রাইটিং, লিসেনিং ও স্পিকিং ভালো করে স্ট্যান্ডার্ড বাড়ানো যাবে।

বাংলানিউজ: কীভাবে?

নজরুল ইসলাম: আমরা দিনের ৯৮ শতাংশ কথা বলি ও শুনি। মাত্র দুই শতাংশ লিখি ও পড়ি। কিন্তু ৯৮ শতাংশের জন্য কোনো প্রস্তুতি নেই। স্কুল-কলেজে কোথাও সুন্দর করে কথা বলা ও শোনার বিষয়ে শেখানো হয় না। এটা অ্যাড্রেস না করলে হবে না।

অল্প সময়ে কেন গুছিয়ে বলতে পারবো না আমরা? আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, অনেকে অল্প সময়ে গুছিয়ে বলতে পারেন।

লিসেনিং ও স্পিকিংয়ের জন্য ইনকরপোরেট করা দরকার। এটার জন্য পরীক্ষার প্রয়োজন, মার্কস দরকার। ইন্ট্রোডিউস করার প্রয়োজন আছে।

মাদ্রাসায় পড়ে কেউ আরবিতে কথা বলতে পারবে না, আরবিতে কথা বলতে পারলে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি যারা করে তারা আরো বেশি বেতন পেতে পারতো। তিনগুণ আয় করতে পারতো।

ঠিক ইংরেজির ব্যাপারেও তাই। ইংরেজি ইনকামের বিষয়। বর্তমান সময়ে ইংরেজি একটা টেকনোলজি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।

বাংলাও ঠিক তাই। সুন্দর করে কথা বলা যায়। এই বলাটা শিখতে হবে। টেলিভিশন, রেডিওতে উপস্থাপনের সুযোগ হবে।

আমাদের শুদ্ধ করে বলতে শেখাতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্কুল থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলানিউজ: এই উদ্যোগ সফল হবে?

নজরুল ইসলাম: স্পিকিং ও লিসেনিংয়ে নম্বর রাখবো, পরীক্ষা নেব। তবে সবাইকে বুঝিয়ে করবো। একবারে করবো না। আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছি।

এর ওপর সেমিনার করবো, মিডিয়ায় প্রচার করবো। এরপর বইগুলোতে হাত দেবো। পরীক্ষার পাস নম্বর বাড়াবো।

কেউ কেউ বলছেন, লিসেনিং-স্পিকিংয়ে নম্বর দিলে শিক্ষকরা নম্বরের অপব্যবহার করবেন। আমি মনে করি, তা হবে না। আমি বিশ্বাস করি না। প্রথম দিকে অভ্যস্ত না হয়ে ইতস্তত বোধ করতে পারে। পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

বাংলানিউজ: আইটি যোগ হওয়ায় শিক্ষায় পরিবর্তন কতোটুকু?

নজরুল ইসলাম: শিক্ষার সঙ্গে আইটি যোগ হওয়ায় এক্সপোজার বেড়েছে। এখন আরো বেশি শেখার সুযোগ হয়েছে। টেলিভিশন যোগ হয়েছে। আগের চেয়ে আমরা এগিয়েছি। স্ট্যান্ডার্ড আর একটু হাই করা দরকার। আকাঙ্ক্ষা উঁচু হওয়া দরকার।

বাংলানিউজ: নম্বর বরাদ্দ ঠিক হয়েছে কি-না?

নজরুল ইসলাম: বিশেষজ্ঞ প্যানেল ইংলিশ স্পিকিং মার্কস ঠিক করবেন। এখনও সবার সঙ্গে কথা বলিনি। গ্রাউন্ড লেবেলে কথা বলেছি। সবার অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত হওয়া দরকার।

বাংলানিউজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা নয়- এ ব্যাপারে আপনার মত কী?

নজরুল ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা আছে। যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা দুই বছর করে মূল্যায়ন করুক। ভালো হলে চালিয়ে যাবে, নয়তো পুনর্বিবেচনা করতে পারে।

আনেকে বলেছেন, এক বছর সময় দেওয়া দরকার। আমি মনে করি, ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। আমি সারা বছর পড়তাম।

বাংলানিউজ: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা থাকা না থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে- এ বিষয়ে?

নজরুল ইসলাম: বর্তমানে শিক্ষার্থীরা পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে পারে না। আগ্রহের ভিত্তিতে ভর্তি হলে ভালো হয়। সেজন্য ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন প্রয়োজন। এ বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করছি।

বাংলানিউজ: শিক্ষার মান নিয়ে যে প্রশ্ন- আপনার মূল্যায়ন কী?

নজরুল ইসলাম: মান কমেছে বলে আমি মনে করি না। মান নির্ণয়ের জন্য ইন্ডিকেটর ও টুল দরকার। কোনো মাপ দরকার হলে দাড়িপাল্লা-বাটখারা দরকার। প্রাইমারিতে মান নির্ণয় হয়। সেকেন্ডারিতে সে ইন্ডিকেটর নেই। আমরা টুল ডেভেলপমেন্ট করার চেষ্টা করছি। এখন গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও থ্যাংক ইউ বললে ওয়েলকাম বলে। আগের চেয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।

তবে মান নিয়ে আমরা স্যাটিসফায়েড না। মান কমেছে বলে শুধু সমালোচনা করলে ছেলে-মেয়েরা হতাশ হবে। তাই বলে পিছন দিকে ঠেলে দিতে পারে না। যারা বলেন মান কমেছে, তাদের ডিসকারেজ করা যাবে না।

সমালোচনা করলে আমাদের ওপর প্রেসার থাকবে। তারা যা বলেছেন, আমরা যা বলছি- দুটোকে এক জায়গায় এনে মাঝামাঝি করতে পারি।

বাংলানিউজ: সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

নজরুল ইসলাম: শিক্ষা ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। প্রাইমারিতে এখন ১০০ জন ছেলে-মেয়ের মধ্যে ৯৮ জনই স্কুলে ভর্তি হয়। উচ্চ মাধ্যমিকে এক কোটির বেশি ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা করে।

প্রাইমারিতে ১৯৭৪ সালে ১০০ জন বাচ্চার মধ্যে ৪০ জন ভর্তি হতো। ছয় বছর আগে ৬০ লাখ সেকেন্ডারিতে, এখন ১ কোটির ওপরে পড়ে।

পাসের হার বেড়েছে, জিপিএ-৫ বাড়ছে। আমাদের স্ট্যান্ডার্ড আর একটু বাড়ানো দরকার।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।