ঢাকা: অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজধানীর স্বনামধন্য মতিঝিল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ফেব্রুয়ারি মাসেও অবৈধভাবে ভর্তি করানো হয়েছে শতাধিক শিক্ষার্থী।
বাংলানিউজের কাছে থাকা ৩টি ভর্তি স্লিপে দেখা যায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অষ্টম শ্রেণিতে একজন এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়েছে। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির লটারি অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ১৪ ডিসেম্বরে। পরবর্তীতে ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এভাবে অবৈধ শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা শতাধিক এবং কোন ধরনের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই এদের ভর্তি করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ে দেয়া এক অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, গত দুই বছরে জনপ্রতি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকজন শিক্ষক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানের একজন সহকারী প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়, গভর্নিং বডির সভাপতি আওলাদ হোসেন ওই শিক্ষিকার কাছে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, স্থায়ীভাবে প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ নিয়োগ না দিয়ে দুই বছর করে পালাক্রমে পছন্দের শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন সভাপতি।
এসব নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। গত বছর স্থানীয় অভিভাবক আনোয়ার হোসেনসহ চারজন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অপরাধ সর্ম্পকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগে বলা হয়, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ১ থেকে ২ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে।
২০১০ সালের মে মাসে মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শূন্যপদে (ইনডেস্কধারী) লিখিত পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী শাহনাজ আক্তার সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগ পাওয়ার পর ওই শিক্ষিকার কাছে এককালীন টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগের বিনিময়ে টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে নানাভাবে হয়রানি করার পাশাপাশি এক পর্যায়ে বাধ্যতামূলক ছুটি, পরবর্তীতে বরখাস্ত করা হয়।
এর প্রতিবাদে ওই শিক্ষিকা মামলা করলে গত ১ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত তাকে চাকরিতে বহালের নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশনাকে আমলে নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে শাহনাজ আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, গভর্নিং বডির সভাপতি আওলাদ হোসেন আমাকে জানিয়েছেন, এখানে শিক্ষকতা করতে হলে অন্যান্য শিক্ষকের মতো লাখ লাখ টাকা দিতেই হবে। টাকা না দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে কেউ চাকরি করতে পারবে না।
ওই শিক্ষিকা আরো বলেন, গত ৫/৬ বছরে কমপক্ষে ৫০ জন শিক্ষককে বিভিন্ন অযুহাতে বরখাস্ত করে পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুনর্বহাল করা হয়েছে। আর স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে অনৈতিক পন্থায় চুক্তির মাধ্যমে পছন্দের শিক্ষকদের দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা আওলাদ হোসেনের কথায় নানা অনিয়ম করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আওলাদ হোসেন সোমবার দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, শূন্য আসনে ভর্তি নেয়া হয়েছে। সিট খালি থাকলে কি করবো! আপনি আসেন, আপনার অনুরোধও রাখা হবে। অন্য লাইন না ধরে সরাসরি আমার সঙ্গে কথা বলেন।
তবে ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলে আসেন কথা হবে। আপনিতো আমাদেরই লোক। বিকেলে একটি অনুষ্ঠানে আমির হোসেন আমু এবং মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া উপস্থিত থাকবেন। ওই অনুষ্ঠানে আমি সভাপতিত্ব করবো।
অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি সর্ম্পকে কিছু জানা যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৫