ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

নতুন বছরে নতুন বই, খুদে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৬
নতুন বছরে নতুন বই, খুদে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ছবি: জি এম মুজিবুর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সাপ্তাহিক ছুটির দিনও বাঁধা মানেনি, সকাল থেকে খুদে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর স্কুল প্রাঙ্গণ। উদ্দেশ্য, নতুন বই পাওয়া।

নতুন বছরের প্রথম দিন, তাই আনন্দটাও ছিল বেশি।
 
খুদে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-অভিভাবকরাও পাঠ্যপুস্তক উৎসবে শামিল হয়েছেন রাজধানীর মিরপুরের ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।
 
ছোট শিশুদের ইউনিফর্মের সঙ্গে উৎসবে যোগ দিতে শিক্ষিকারাও এসেছিলেন একই রঙের শাড়ি পরে, শিক্ষকদেরও ছিল একই ধরনের পোশাক। প্রতিষ্ঠান ভেদে ছিল ভিন্ন ভিন্ন রঙ।
 
শুক্রবার (০১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয়ভাবে এ স্কুলে উৎসবের আয়োজন করে। একই দিন সারা দেশে পালিত হচ্ছে বই উৎসব।
 
মিরপুরের ন্যাশনাল স্কুল মাঠে খুদে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বেলা ১১টার পর রঙ বেরঙের বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার।
 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে না পারলে জ্ঞানভিত্তিক জাতি গড়তে পারবো না। আমাদের সন্তানেরা সেটা পারবে। বছরের প্রথম দিন হাতে হাতে বই তুলে দিয়ে আমরা নজির স্থাপন করেছি।

‘আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন পৃথিবীর উপযোগী হয়ে ওঠে। মানসম্মত মানে শুধু এ দেশের জন্য নয়, পৃথিবীর যেকোনো দেশের জন্য উপযোগী হয়ে উঠবে তারা’।
 
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে ২৯১টি বিষয়ের ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৬০টি বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে।
 
সকালে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল মাঠে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস’র উদ্বোধন করেন।

উৎসবের উদ্বোধনের পর মন্ত্রী বলেন, নতুন বছরের নতুন বই হাতে নিয়ে গন্ধ শুঁকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে, তাতে আমরা সফল হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের কারণে এ সফলতা।
 
এরপরই হাতে হাতে বই দেওয়া শুরু হয় মঞ্চ থেকে। নতুন বই হাতে হাত উঁচিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। নতুন বই পেয়ে গন্ধ শুঁকে ঢাক-ঢোলের তালে মাঠজুড়ে ছুটোছুটি করছিল শিক্ষার্থীরা।
 
ন্যাশনাল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলছিলো, ‘নতুন বছরের প্রথম দিন উৎসবের মাধ্যমে বই পাওয়া, খুবই আনন্দ লাগছে’।
 
এ স্কুল ছাড়াও আশেপাশের বেশ ককেয়টি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা উৎসবে অংশ নেয়।

নিজ স্কুলে বই নিয়ে উৎসবে এসে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে মিরপুরের সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়া মনি। তার ভাষ্য, ‘আমাদের স্কুলে বই দিয়েছে। কিন্তু উৎসব করতে এখানে এসেছি’।
 
ছোটদের সঙ্গে উৎসবে আসা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মাঝেও ছিল আনন্দ।
 
কল্যাণপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হাসিনা পারভীন বলেন, উৎসবে যোগ দিতে কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে তারা এখানে এসেছেন। নতুন বছরের এ উৎসব শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার আগ্রটাও বাড়িয়ে দেবে।
 
তার স্কুলের ২২ জন শিক্ষিকার সবাই একই রঙের শাড়ি পরে এসেছেন বলেও জানান হাসিনা পারভীন।
 
এছাড়াও মিরপুরের আব্দুল মান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারাও পরে আসেন এক রঙের শাড়ি।
 
আব্দুল মান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার বলেন, নিজেদের স্কুলে বই বিতরণের আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন উৎসবে যোগ দিতে।
 
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তিন মাস ছেলে-মেয়েদের বই মুখস্ত করাবেন। এতে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও জানতে পারবে’।
 
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সারা দেশে মোট ২ কোটি ২৩ লাখ ২২ হাজার ৪২৮ জন প্রাথমিক শিক্ষার্থীর মাঝে ১০ কোটি ৮৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৭টি বই বিতরণ করবে তারা। এছাড়া ৩২ লাখ প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের হাতে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৮ হাজার ৫৩টি বই ও অনুশীলন খাতা বিতরণ করা হবে।
 
২০১০ সাল থেকে প্রথম-নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের বই বিতরণ করে এলেও পরের বছর থেকে পাঠ্যপুস্তক উৎসব করে আসছে সরকার।
 
মিরপুরের উৎসবে সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্,  উম্মে রাজিয়া কাজল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
 
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন খালিদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আলমগীরও বক্তব্য রাখেন।
 
প্রাথমিক বইয়ের কাগজের মান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি রয়েছে, তারা বিষয়টি দেখবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর

** খাগড়াছড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশে বই উৎসব
** পটুয়াখালীর ৩ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই
** গোপালগঞ্জে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই উৎসব
** নতুন বই পেয়ে খুশি বরগুনার শিক্ষার্থীরা
** নেত্রকোনায় বিনামূল্যে বই পেলো শিশুরা
** লক্ষ্মীপুরে ১৮ লাখ নতুন বই পেলো শিক্ষার্থীরা
** দেশ মাতলো বই উৎসবে
** নতুন বই পেলো পিরোজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
** নতুন বই পেলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিক্ষার্থীরা
** বছরের শুরুতে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা পেল নতুন বই
** নড়াইলে বই উৎসব অনুষ্ঠিত
** ন্যাশনাল বাংলা স্কুলে বই উৎসবের আমেজ
** বরিশালে বই উৎসবে মেতেছে শিশুরা
** নতুন বইয়ে মাতোয়ারা ফেনীর শিশুরা
** বই উৎসবের অপেক্ষায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী
** জয়পুরহাটে উৎসবমুখর পরিবেশে বই বিতরণ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।