ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিশুদের ক্লাস-আড্ডায় নতুন বই

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৬
শিশুদের ক্লাস-আড্ডায় নতুন বই ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেনী: ঘড়ির কাঁটা সকাল সোয়া ৯টা পেরিয়ে ঘুরছে। কুয়াশার চাদর ভেদ করে সূর্যটা আড়মোড়া ভাঙছে তখন।

স্কুলের পথে শিশুর দল। সবার হাতে নতুন বই। কেউ বুকে আগলে রেখে, কেউ ব্যাগে সযত্নে রেখে হেঁটে চলেছে শ্রেণিকক্ষের দিকে। ক্লাস শুরু হওয়ার আগে দ্রুত পৌঁছাতে মাকে তাগাদা দিচ্ছে, ঘ্রাণমাখা নতুন বই পড়তে হবে যে।
 
রোববার (১০ জানুয়ারি) ফেনী শহরের রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পথে পথে দেখা যায় এমন উচ্ছ্বাস।

ক্লাস তখনও শুরু হয়নি, কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণির পুরো কক্ষ কচি-কাচায় ভরে গেছে। তাদের উচ্ছ্বাস-আলাপে যেন মুখরিত হয়ে আছে পুরো এলাকা। ক্লাস শুরু হওয়ার আগে যে আড্ডাটা জমেছে, তাতে এখন নতুন বই পড়ার আনন্দের ভাগাভাগি। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ডোকার সঙ্গে সঙ্গে সালাম দিয়ে পড়া শুরু। ছিল বাংলার ক্লাস, সবার মুখে ছড়া।

আলাপ হচ্ছিল দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আঁখির সঙ্গে। সে জানায়, নতুন বইয়ের ছবিগুলো তার কাছে ভীষণ ভালো লাগে, তাই সারাদিন সে ছবিগুলোই দেখে। মাঝে মাঝে গল্পগুলোও পড়ে।

ওই শ্রেণির শান্তা, লাইজুসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারও কাছে নতুন বইয়ের ছড়া-গল্প ভাল লাগে, আবার কারও কাছে বেশি ভালো লাগে নতুন বইয়ের ছবিগুলো।

এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুল হক জানান, বছরের প্রথমে সরকার শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ায় সবারই সুবিধে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস কাজ করছে।

রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে সকাল ৯টার আগে ফেনী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের মাঠের কোণে রিতা, সুচিতা, মুন্নী, প্রেমাসহ একদল বান্ধবী আড্ডা দিচ্ছে। তখনও ক্লাস শুরু হয়নি। তাদের আড্ডায় নতুন বই নিয়েই আলাপ। সবাই মনোযোগ দিয়ে বইগুলো দেখছে, চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক।

আলাপ করলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুস্মিতা জানায়, বছরের প্রথমে বই পেয়ে সে দারুণ খুশি। বইয়ের একেবারে প্রথম থেকে পড়া শুরু করেছে সে।

ওই প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সূচির মা সাহেদা আক্তার জানান, তার মেয়ে স্কুল থেকে বাসায় গিয়ে সারাদিন বাংলা বই নিয়ে গল্প-কবিতায় মগ্ন থাকে। সেগুলো তার খুব ভালো লাগে।

নতুন বইয়ের ব্যাপারে সূচির কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, বাসায় গিয়ে বই ব্যাগে ঢোকাতে মন চায় না তার। নতুন বইয়ের গন্ধ শুকতে অনেক বেশি ভালো লাগে সূচির।

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সুব্রত নাথ বলেন, বছরের প্রথমে বই পেয়ে শিশুরা যেমনিভাবে আনন্দিত, তেমনিভাবে শিক্ষকরাও পাঠদানে উৎসাহী। বছরের প্রথমে বই পেয়ে যাওয়ায় বছর শেষ হওয়ার আগেই সিলেবাস শেষ করা যাবে।

সকাল তখন দুপুরের দিকে গড়াচ্ছে। সেসময় ফেনী সরকারি পাইলট হাইস্কুলে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাস শুরুর আগেই শ্রেণিকক্ষ ভরপুর। ভীষণ মনোযোগ দিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়ছে। আলাপে জানা গেল, নতুন বইয়ের কারণেই এত আগ্রহ আর উচ্ছ্বাস।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিলয় জানায়, নতুন বইগুলোর পাতা উল্টোতেই তার দারুণ লাগে। সেই দারুণ লাগাটা পড়ায় মনোযোগ বাড়ায়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছেমন আরা বলেন, একটা সময় ছিল, যখন আমরা পড়ালেখা করতাম, তখন বছরের ৩-৪ মাস চলে যেতো, নতুন বইয়ের খবর থাকতো না। এদিক-ওদিক থেকে বই ধার-কর্জ নিয়ে শুরু হতো বছরের পড়া।

তিনি বলেন, এখন শিক্ষার্থীদের কী সৌভাগ্য! বছরের শুরুতেই নতুন বই তাদের হাতে। এতে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার প্রতি আগের চাইতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
 
যদিও শিশুদের এতো উচ্ছ্বাস-আনন্দের মধ্যেও বই নিয়ে অভিভাবক-শিক্ষকদের রয়েছে নানা অভিযোগ। তাদের মতে, কাগজ ও ছাপা বেশ নিম্নমানের। অনেক বই অগোছালোও, আবার পাতাও নেই। কাগজ নিউজ প্রিন্টকেও হার মানিয়েছে। অনেকের প্রশ্ন, এ রকম বই দিয়ে ছোট ছোট শিশুরা কীভাবে এক বছর পড়াশোনা করবে?

রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুল হক জানান, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইগুলোর প্রায় সব বিষয়ে ভেতরের অনেকগুলো পাতা নেই। আবার অনেক জায়গায় ছেঁড়া ও ফাটা। চতুর্থ  শ্রেণির আমার বাংলা বই ও প্রাথমিক বিজ্ঞান বই দু’টিতে এক পৃষ্ঠার ছাপানো ছবি অন্য পৃষ্ঠায়ও ছড়ানো। যার ফলে ওই পৃষ্ঠার লেখাগুলো আর ভালোভাবে পড়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, প্রতিটি বইয়ের সুদৃশ্য মলাট ও বাইন্ডিং থাকলেও আসল জায়গায় ঝামেলা। কাগজ ও ছাপার মানের সঙ্গে সুদৃশ্য মলাট খুবই বেমানান। তাছাড়া, বইয়ের ভেতরেও অনেকগুলো পাতা নেই।

অভিভাবক ও শিক্ষকদের মতো মুজিবুল হকও চান, নতুন বইয়ের এসব ত্রুটি দূর করে সরকার যেন ভালো বই শিশুদের হাতে তুলে দিতে পদক্ষেপ নেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৬
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।