ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ব্যাগের ভারে কাহিল শিশু শিক্ষার্থীরা

হাসিবুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
ব্যাগের ভারে কাহিল শিশু শিক্ষার্থীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘ব্যাগ অনেক ভারী, প্রতিদিন কাঁধে করে নিয়ে আসতে কষ্ট হয়। কিন্তু ক্লাসে বই না নিয়ে আসলে স্যার-ম্যাম’রা বকা দেন’।

কথাগুলো বলছিল রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের (উদয়ন স্কুল) তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদা মুরশিদ।

শুধুমাত্র সানজিদাই নয়, কিংবা এই স্কুলটিই নয়, রাজধানীর অধিকাংশ সরকারি, বেসরকারি স্কুলের শিশুদের সানজিদার মত একই দশা। ব্যাগের বোঝা টানতে টানতেই কাহিল। শিক্ষকদের দাবি শিশুদের আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাখতেই সরকার নির্ধারিত বইয়ের পাশাপাশি সহায়ক বই দিতে হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্যান্য বই পড়ার প্রয়োজন হলেও সে বইয়ের বোঝা শিশুদের কাঁধে চাপানো যাবে না।

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা যায়, শিশু শিক্ষার্থীদের কাঁধে এই ব্যাগের বোঝা। যেসব বইয়ের বোঝা কাঁধে করে আসা যাওয়া করেই ক্লান্ত কমলমতি শিশুরা। আবার এসব শিশুদের অনেকের সঙ্গেই নিয়মিত আসেন অভিভাবকরা। শিশু শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও টানতে হয় এসব ওজনওয়ালা ব্যাগ।

সম্প্রতি মুন্সী আব্দুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেজিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর ব্যাগে দেখা যায়, ছয়টি বই, পাঁচটি খাতা, একটি ডায়েরি, এক প্যাকেট রঙ পেন্সিল, পেন্সিল বক্স, টিফিন বক্স এবং পানির পট বা বোতল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই শিক্ষার্থীর মা বাংলানিউজকে বলেন, মাত্রই স্কুলে ভর্তি হয়েছে কতটুকুই আর পড়া, কিন্তু বই-খাতা দিয়ে ব্যাগ ভরে গেছে। অবস্থা এমন যে কেজির পড়া শেষ করেই সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। একটা-দু’টা বই কম দিলেও হতো।

এদিকে, উদয়ন স্কুলের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার প্রদত্ত তিনটি বই ছাড়াও ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে আরও আটটি সহায়ক বইয়ের লিস্ট। আবার এর সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, অঙ্গনসহ বিভিন্ন ধরনের পনেরটি খাতা। এছাড়াও বিভিন্ন রকম আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের লিস্ট তো রয়েছেই।

উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ড. উম্মে সালমা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রুটিনে যে ক্লাস থাকে আমরা বাচ্চাদের শুধু ওই বইগুলোই নিয়ে আসতে বলি। অনেক সময় দেখা যায়- বাচ্চারা ক্লাসের বাইরেও বই-খাতা নিয়ে আসে।

তিনি আরও বলেন, বোর্ড থেকে যে বইগুলো দেওয়া হয়েছে এর বাইরেও কিছু সহায়ক বই দিতে হয়, কারণ ভালো ফলাফলের জন্য এগুলো প্রয়োজন। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ভালোভাবে কথা বলতে পারে না, তাদের কথা মাথায় রেখে আরও ইংরেজি বই দেওয়া হয়।

তবে প্রিন্সিপালের এই বক্তব্য নাকচ করে কামরুন নাহার নামে এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, এসব অতিরিক্ত বই অধিকাংশ সময় দেওয়া হয় বিভিন্ন প্রকাশনীর সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তির ভিত্তিতে। যেগুলো সারাবছরে একবারও পড়ানো হয় না।

শিশু শিক্ষার্থীদের ভারী ব্যাগের প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল আউয়ালের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ছোট ছোট শিশুদের পড়াশোনা হওয়া উচিত খেলার মাধ্যমে। তবে সেসব চর্চাতো আমাদের দেশে নেই। এক্ষেত্রে স্কুলগুলো সহায়ক বই পড়ানোর জন্য পাঠাগার করে সমাধান করতে পারে।

তিনি বলেন, আবার বিদ্যালয়গুলোতে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ করা গেলেও শিশুদের ব্যাগের ওজন কিছুটা কমানো যাবে। একই সঙ্গে ব্যাগের ডিজাইনেও পরিবর্তন আনা জরুরি।

তবে এই অধ্যাপক স্কুল অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (সোডা) প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই স্কুলটি কিন্তু বই-খাতা বাসায় না নিয়েই শিশুদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছে। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এমন নজির দেখাতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৬
এইচআর/আইএ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।