ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বিশেষ শিশুদের জন্য সেনাবাহিনীর ‘প্রয়াস’

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
বিশেষ শিশুদের জন্য সেনাবাহিনীর ‘প্রয়াস’ ছবি: বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গ্রামের মেঠোপথে পালকীতে করে যাচ্ছে নববধূ- এমন ছবি আঁকছে অনিন্দ। রক্ত গোলাপের ছবি নকশি কাঁথায় বুনছে সুবা, সাদা কাগজে পেনসিল দিয়ে ‘অ’, ‘আ’ লিখছে শরিফ। অনিন্দ, সুবা ও শরিফের সামনে শিক্ষকরা আদর-স্নেহে হাতে ধরে শিখিয়ে দিচ্ছেন।

ঢাকা: গ্রামের মেঠোপথে পালকীতে করে যাচ্ছে নববধূ- এমন ছবি আঁকছে অনিন্দ। রক্ত গোলাপের ছবি নকশি কাঁথায় বুনছে সুবা, সাদা কাগজে পেনসিল দিয়ে ‘অ’, ‘আ’ লিখছে শরিফ।

অনিন্দ, সুবা ও শরিফের সামনে শিক্ষকরা আদর-স্নেহে হাতে ধরে শিখিয়ে দিচ্ছেন।  
 
শিশুদের আঁকা-আঁকি, পড়ালেখা আর কোলাহলে মুখরিত ‘প্রয়াস’ প্রাঙ্গণ। পড়ালেখা, আঁকাআঁকির বাইরেও বিভিন্ন থেরাপি দিয়ে বড় হচ্ছে শিশুরা।  
 
শরিফ, সুবা, অনিন্দরা আর দশটা সাধারণ শিশুর মতো নয়, বিশেষ শিশু। কিন্তু অনেকটা সাধারণ শিশুর মতই তারা পড়ালেখা, ছবি আঁকার কাজ করছে। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় ‘প্রয়াস’র মাধ্যমে মূল ধারায় একীভূত হচ্ছে এসব শিশু।  
 
প্রয়াসের কার্যক্রম তুলে ধরতে রোববার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসে আমন্ত্রণ জানানো হয় সাংবাদিকদের। বিশেষ শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরেন প্রয়াসের নির্বাহী পরিচালক ও অধ্যক্ষ কর্নেল শহীদুল আলম।
 
‘বিশেষ শিশু, বিশেষ অধিকার’- এ মূলমন্ত্র নিয়ে কাজ করছে ‘প্রয়াস’; বলছিলেন অধ্যক্ষ।  
 
বিশেষ শিশুদের সর্বোত্তম বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি, প্রশিক্ষণ শেষে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ এবং শিশুদের সহায়তাকারী অভিভাবক-শিক্ষক-ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে প্রশিক্ষণ দেওয়াই প্রয়াসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।  
 
প্রাক-শৈশবকালীন বিকাশমূলক কার্যক্রম
অপুষ্টিজনিত বা বিকাশের দিক থেকে পিছিয়ে পড়া ২-৪ বছর বয়সী শিশুদের ‘মা ও শিশু কার্যক্রম’র মাধ্যমে শিক্ষার্থী, মা ও পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। উন্নতির উপর ভিত্তি করে ৪-৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দ্দিষ্ট অক্ষমতা নিরসনের মাধ্যমে সঠিক নৈপূণ্য অর্জনের শিক্ষা এবং বিদ্যালয়ে যাবার প্রাক-প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে প্রয়াস।  
 
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়
প্রথম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত বয়স, চাহিদা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় জাতীয় কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠদান ও মূল্যায়ন করা হয়। শারীরিক ও ইন্দ্রিয়গত অসুবিধার জন্য যথানিয়মে ব্যায়াম ও সেন্সরি থেরাপি পায় শিশুরা।  
 
বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়
১৪-২২ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা হস্তশিল্প, কম্পিউটার ও রান্নার কাজে প্রশিক্ষণ পায়। এদের অনেকেই মূলধারায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে।  
 
অবসর বিনোদন ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম
বয়স্ক শিক্ষার্থীদের দক্ষতার প্রশিক্ষণের পাশাপাশি রয়েছে নানা বিনোদনমূলক আয়োজন।
 
বিশেষ শিক্ষার স্কুল 
৬-১৪ বছর বয়সের অটিজম, সেরিব্রাল পলিসি ও শারিরীক বাধাগ্রস্থ শিশু, বুদ্ধি, দৃষ্টি, বাক ও শ্রবণ সমস্যা জনিত শিক্ষার্থীদের জুনিয়র, মিডল ও সিনিয়র বিভাগের শ্রেণিতে বিশেষ শিক্ষা দেওয়া হয়।  
 
থেরাপিউটিক সেবা 
প্রতিবন্ধিতার প্রকৃতি ও মাত্রানুযায়ী সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে অকুপেশনাল ও ফিজিও থেরাপি; সেন্সরি ইনটিগ্রেশন থেরাপি এবং যোগাযোগ, ভাব বিনিময় ও ভাষাগত দক্ষতার থেরাপি দেওয়া হয়।  
 
বিশেষায়িত ইন্টারভেনশন ক্লিনিক 
রোগ নির্ণয়, ইইজি, অডিওলজি, সাইকোলজিক্যাল অভীক্ষা ও কাউন্সিলিং সেবাদানে রয়েছে অত্যাধুনিক ইন্টারভেশন ক্লিনিক। এখানে দক্ষ শিশু বিশেষজ্ঞ, নিউরোলজিস্ট, ডায়েটিশিয়ান এবং মনোবিজ্ঞানীসহ রয়েছে বিশেষজ্ঞ থেরাপিস্ট।  
 
প্রত্যয় ইনক্লুসিভ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল
ইনক্লুসিভ ইংলিশ মিডিয়াম এ স্কুলে প্লে-গ্রুপ থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে বিশেষ শিক্ষার্থীরা একীভূত হয়ে লেখাপড়া শিখছে।
 
বিশেষ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
বিশেষ শিক্ষার মান উন্নয়ন ও দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরির লক্ষ্যে অনার্স, মাস্টার্স, পোস্ট গ্রাজুয়েশন এবং সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা করছে প্রয়াস।  
 
আউটডোর থেরাপি সার্ভিস
সীমিত পর্যায়ে আউটডোর থেরাপি সার্ভিস চালু করে চলতি বছর থেকে বিশেষ শিশুদের পাশাপাশি বয়স্কদেরও ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা করা হয়েছে।  
 
প্রয়াসের সাফল্য 
বিশেষ শিক্ষার্থীরা স্পেশাল অলিম্পিকসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছে।  
 
ভর্তি ও অন্যান্য 
প্রয়াস অর্থিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবারের বিশেষ শিশুদের নির্দিষ্ট কোটায় বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করে। এছাড়া শতকরা ৯৯% শিক্ষার্থীর টিউশন ফি-তে অভিভাবকদের উপার্জনকে বিবেচনায় নিয়ে ভর্তুকী দেয়া হয়।
 
অধ্যক্ষের কথা
নানামুখী সাফল্যের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াসের কর্মকাণ্ড বিভিন্ন সেনানিবাসের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
 
বর্তমানে ঢাকাসহ নয়টি সেনানিবাসে প্রয়াসের শাখা রয়েছে জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিটি সেনানিবাসে প্রয়াসের কার্যক্রম শুরু করা।   
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।