ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ইংরেজি শিখে আত্মপ্রত্যয়ী প্রান্তিক কিশোরীরা

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬
ইংরেজি শিখে আত্মপ্রত্যয়ী প্রান্তিক কিশোরীরা ছবি: ইংরেজি শিখছে শিশুরা- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক গ্রামেই এখনো বাল্য বিয়ে আর পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ার প্রতিযোগিতা চলছে। এমন একটি সময়ে মানিকগঞ্জের শিবালয়ের প্রত্যন্ত...

ঢাকা: দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক গ্রামেই এখনো বাল্য বিয়ে আর পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ার প্রতিযোগিতা চলছে। এমন একটি সময়ে মানিকগঞ্জের শিবালয়ের প্রত্যন্ত গ্রাম ষাটঘর তেওতার মেয়ে সেনিয়া আক্তার যেন একটি উজ্জ্বল নাম।


 
শহুরে স্কুলের মেয়েদের মতোই সাবলীল ইংরেজিতে কথা বলা সেনিয়া এখন গ্রামের মধ্যমনি। বিদেশি অতিথি এলে ডাক পড়ে তার। এগিয়ে দেওয়া হয় সোনিয়াকে।
 
তবে শুধু ইংরেজি শিক্ষাই নয়, আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম উপাদান কম্পিউটারও ব্যবহার করতে পারে সে। অথচ কিছু দিন আগেও কম্পিউটার ছুঁয়ে দেখারও অধিকার ছিল না তার।
 
এখন ইংরেজি বলতে পারা, কম্পিউটার চালানোর দক্ষতা অর্জন করা সোনিয়া দারুণ এক আত্মবিশ্বাসে এগিয়ে চলেছে।

শুধু সোনিয়া নয়, তার মতো অসংখ্য কিশোরীর মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে ইংলিশ অ্যান্ড ডিজিটাল ফর গার্লস এডুকেশন (ইডিজিই) প্রকল্প। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল এ প্রকল্পটি পরিচালনা করছে।
 
প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে দুপুরের পরে স্কুল কলেজ থেকে ফিরে অন্যান্য গ্রামের শিক্ষার্থীরা যেখানে পারিবারিক কাজ কিংবা খেলাধুলায় মেতে ওঠে, তখন সোনিয়ারা হাজির হয় কিশোরী ক্লাবে। ইংরেজি শেখা ও কম্পিউটারের নানা কাজ সেখানে গল্পচ্ছলেই শেখে তারা। কোনো রাশভারি শিক্ষকের কাছে নয়, নিজেদের বন্ধুর কাছেই। যে বন্ধুকে কিছুদিন আগে তাদের দলনেতা নির্বাচন করা হয়েছে। সেই শিখে অন্যদের শেখায়। স্কুল শেষে এসব ক্লাবে কিশোরীদের পাশাপাশি যোগ দেয় কিশোররাও।
 
সোনিয়ার মতোই আরেক কিশোরী লাকি আক্তার। একসময় ইংরেজি বলতে লজ্জা পেলেও এখন ইংরেজিতে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারে। নিজের স্কুলের কম্পিউটার ছুঁয়ে দেখতে না পারলেও ইডিজিই প্রকল্পের দেওয়া ল্যাপটপ বাড়িয়ে দিয়েছে তার আত্মবিশ্বাস।
 
ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে জানা যায়, মানিকগঞ্জের পাশাপাশি টাঙ্গাইল, গাইবান্ধা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ২৬৪টি ইডিজিই ক্লাব রয়েছে। এসব ক্লাবে রয়েছে ৫৯৯ জন দলনেতা। আর ক্লাবগুলোতে নিয়মিত অংশ নেয় ৬ হাজার ৫৭৩ জন শিক্ষার্থী।
 
সংশ্লিষ্টরা বলেন, ইংরেজিতে কথা বলা ও লেখার দক্ষতা তৈরির পাশাপাশি নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা বৃদ্ধি করে এই ক্লাব। কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়। যার মাধ্যমে পরিবার, সমাজ এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে তারা।
 
মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্রনাথ কলেজে ইংরেজি বিভাগের অনার্সের ছাত্রী শ্যামলী দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, ইডিজিই ক্লাবের মাধ্যমেই সাহস পেয়েছি সামনে এগিয়ে যাওয়ার। এখন পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করতে চাই। পাশাপাশি উৎসাহিত করতে চাই প্রত্যন্ত এলাকার কিশোরীদের।
 
কিশোরী ক্লাব থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাসের জোরে শ্যামলী শুধু ইংরেজিতে অনার্সই পড়ে না, মানিকগঞ্জ সদরের দুইটি কোচিং সেন্টার এবং একটি স্কুলেও বাচ্চাদের ইংরেজি শেখান। এতে নিজের পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি পরিবারকেও অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে পারেন।
 
শ্যামলী বলেন, আমি ইডিজিই ক্লাবে মজায় মজায় ইংরেজি শিখেছি। কম্পিউটার শেখার কারণে পৃথিবীর উদার জ্ঞান ভাণ্ডারের সন্ধান পেয়েছি এবং নিজের জীবন নিয়েও পরিকল্পনা করতে পারছি। ব্র্যাক এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল এভাবে অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর জীবনকে সাজিয়ে তুলছে, এজন্য তাদের ধন্যবাদ।
 
এই ক্লাবে দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, গল্পের বইয়ের পাশাপাশি গেমস, দাবা, ক্যারাম কেলার সরঞ্জামাদিও রয়েছে। যা তাদের বাড়তি মনোরঞ্জন দেয়।
 
২০১২ সালে মানিকগঞ্জের বেতিলাতে শুরু হওয়া ইডিজিই ক্লাবের পাইলট প্রকল্প এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে। এর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১৫ সাল থেকে নেপাল ও ভারতে এই মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬
জেপি/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।