একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এটিও পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার শিকার হয়। নৃশংস সে হামলার বিভিন্ন চিহ্ন এখনো বিদ্যমান।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঢাবি ক্লাবের সংস্কার করা হয়েছে সম্প্রতি। সবকিছুতে এসেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া, আধুনিকায়ন করা হয়েছে ক্লাব লাইব্রেরিটিকে।
ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ক্লাবটির সামগ্রিক পরিশীলিত রুপদানের লক্ষ্যে আমাদের ঐকান্তিক প্রয়াস অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্লাবের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও সেবার মান নিশ্চিতকরণ এবং সত্যিকার অর্থে বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একটি প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করার চেষ্টা করছি’।
ক্লাবের ২য় তলার উত্তর পাশে নবসজ্জিত ও আধুনিকায়িত লাইব্রেরিটির অবস্থান। এ লাইব্রেরিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় সাতশ’ বই। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের জার্নালও।
লাইব্রেরির একপাশে রয়েছে ইন্টারনেট ব্রাউজের সুবিধা। অন্যপাশে রয়েছে শিক্ষকদের আলোচনার বিশেষ ব্যবস্থা।
সংবাদ সম্মেলন, ছোট পরিসরে সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের উপযোগী করে ২য় তলার দক্ষিণ পাশে তৈরি করা হয়েছে কনফারেন্স কক্ষ। সেখানে ৩৪ জনের জন্য নির্ধারিত চেয়ার রয়েছে। অতিরিক্ত চেয়ার দিয়ে সর্বমোট ৭০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। পুরো কক্ষটি আধুনিকায়িত করা হয়েছে বলেও জানান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন।
এদিকে শিক্ষকদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে ক্লাব সম্পর্কিত সকল তথ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইটটির লিংক www.dhakauniversityclub.org
শিক্ষকদের আড্ডার জন্য পার্কের মতো তৈরি করা হয়েছে চোখ ধাঁধানো ‘নন্দন চত্বর’। চারদিকে সবুজ ঘাস আর ফুলের গাছ এবং এর মাঝ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের রাস্তা। বাগানের ডানপাশে তৈরি করা হয়েছে আড্ডাস্থল। সৌন্দর্য বর্ধনে স্থাপন করা হয়েছে পানির ফোয়ারা, রয়েছে চেয়ার ও দোলনা।
ক্লাবের প্রবেশপথে তৈরি করা হয়েছে গেট। সদর দরজায় স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল। দৃষ্টিনন্দন আল্পনা, চিত্র আর বাণীতে সাজানো হয়েছে ক্লাবের দেয়াল। রয়েছে ক্লাব ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, মেডিসিন কর্নার, লন্ড্রি, সেলুন ও বিউটি পার্লার। ক্লাবের খাবারের দোকানের আইটেমেও এসেছে বৈচিত্র্য।
ক্লাব সদস্যদের সন্তানদের জন্য চিত্রাঙ্কন শেখানোর জন্যও রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
শিক্ষকদের বিনোদন ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠা এ ক্লাবের অনুষ্ঠানমালাতে এসেছে নতুনত্ব। প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় অসাম্প্রদায়িক চেতনার ‘বাউল সন্ধ্যা’, ‘পিঠা উৎসব’, ‘রবীন্দ্র-নজরুল সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা’। বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ, ক্লাবের প্রীতি সম্মিলনী অনুষ্ঠানও করা হচ্ছে অনাড়ম্বর আয়োজনে।
বরেণ্য ব্যক্তিদের ক্লাব সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে গত বছর থেকে। ‘প্রীতি সম্মিলনী’২০১৬’ তে অধ্যাপক ড. কাজী আবদুল ফাত্তাহ ও অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল আহাদ, রবীন্দ্র-নজরুল সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং ‘প্রীতি সম্মিলনী’২০১৭’ তে অধ্যাপক ড. অজয় রায় ও অধ্যাপক কে এ এম সা’দউদ্দিন এ সম্মাননা লাভ করেন।
বর্তমানে ক্লাবের শিক্ষক সদস্য ১ হাজার ৭৫০ জন, কর্মকর্তা সদস্য ২৫০ জন এবং সহযোগী সদস্য ৫০ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭
এসকেবি/এএসআর