ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সহপাঠীর জানাজায় যেতে বাস না পেয়ে রাবিতে বিক্ষোভ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
সহপাঠীর জানাজায় যেতে বাস না পেয়ে রাবিতে বিক্ষোভ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাবি: সহপাঠীর জানাজায় অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে পরিবহন সুবিধা চেয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। বন্ধুকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য বাসের দাবিতে টানা চার ঘণ্টা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করা হয়। কিন্তু প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বাসের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে। অবশেষে নিজেরাই বাস ভাড়া করে যাত্রা করেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানিউর রহমান এক সপ্তাহ ধরে হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি হাসপাতালে মারা যান।

সানিউর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক। তিনি নেত্রকোনার আটপাড়া থানার দেওশ্রী গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। সন্ধ্যা ৬টায় গ্রামের বাড়িতে সানির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানা গেছে, সানির গ্রামের বাড়িতে তার জানাজায় অংশ নিতে যাওয়ার জন্য বাস চেয়ে সহপাঠী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাস দিতে অস্বীকৃতি জানালে শিক্ষার্থীরা বাসের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। বাস না দেওয়ায় দুপুর দেড়টার দিকে প্রথমে তারা বাস চলাচল বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে দুপুর পৌনে ২টার ট্রিপের কোনো বাস চলেনি। পরে দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা, প্রক্টর লুৎফর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা জান্নাতুল ফেরদৌস ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহার করতে বলেন।
 
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমাদের দাবি অযৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বাস দেওয়া সম্ভব নয়। এভাবে বাস দেওয়ার নজির নেই।
 
উপাচার্যের কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে সানির সহপাঠী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বন্ধুকে শেষ বারের মতো দেখবো বলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বাস চেয়েছি। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনায় বাস দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিয়েতে বাস দেওয়া হয়। কিন্তু সানির জানাজায় অংশ নিতে বাস না দিয়ে প্রশাসন তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

টানা তিন ঘণ্টা আন্দোলনের পর বিকেল সাড়ে ৪টায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। উপ-উপাচার্য বলেন, বিষয়টি আমাদের বুঝতে একটু সমস্যা হয়েছিল। তবে সানির বাড়ি অনেক দূরে, এখন বাস দিলেও শিক্ষার্থীরা জানাজায় অংশ নিতে পারবে না। তাই পরে শিক্ষার্থীরা সানির বাসায় যেতে চাইলে বাসের ব্যবস্থা করা হবে।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সানির বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হবে জানানো হলে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী মারা গেলে তার জানাজায় অংশ নিতে এর আগে বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এবার বাস না দেওয়ায় আমরা প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। প্রশাসন আমাদের বাস দেয়নি। তাই আমরা নিজেরাই বাসের ব্যবস্থা করেছি।

জানতে চাইলে রাবি প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, অনেক দূরে হওয়ায় আমরা বাস দিতে রাজি হইনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।