বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত তারা এ অবরোধ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে তারা আন্দোলন করতে থাকেন।
এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে মারধরের শিকার ওই শিক্ষকের নাম এটিএম এনামুল জহির। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
এটিএম এনামুল জহিরের বরাত দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি তার মেয়েকে দেখতে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ে যাচ্ছিলেন এনামুল জহির। এ সময় ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক মেরি প্রিয়াংকা সঙ্গে তার ধাক্কা লাগে। এতে ওই নারী চিকিৎসক তাকে গালাগালি শুরু করলে এনামুল জহির তাকে ‘ননসেন্স’ বলে মন্তব্য করেন। পরে প্রিয়াংকা মোবাইল ফোনে বিষয়টি আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসক কামালকে জানায়।
কামাল কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে নিয়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে যায় এবং সেখানে তাকে বেধড়ক মারধর করে। পরে ঘটনাটি জানতে পেরে রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) গোলাম মোস্তফা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
তবে মেরি প্রিয়াংকার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকজন ওটি (অপারেশন থিয়েটার) থেকে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় ওই শিক্ষকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। আমি উনাকে বলি, ‘আপনি দেখে চলবেন না?’ তখন তিনি আমাকে ননসেন্স বলেন। আমি বলি, আপনি কি বললেন? তখন তিনি আবারও আমাকে ‘ননসেন্স’ ও অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় (প্রকাশ অযোগ্য) গালি দেন। এ সময় আমার বন্ধুরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেন এবং ‘সরি’ বলতে বলেন। এ সময় তিনি আইনের অধ্যাপক বলে নিজেকে পরিচয় দিয়ে ‘সরি’ বলতে অস্বীকৃতি জানান। ’
বেলা সাড়ে ১১টার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা দোষীদের গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও তারা তাতে কর্ণপাত না করে আন্দোলন চালিয়ে যান। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বসে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
ভুক্তভোগী এনামুল জহির ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে আন্দোলন বন্ধ করার আহ্বান করলেও শিক্ষার্থীরা না শোনায়, তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যানার নিয়ে প্রধান ফটক থেকে চলে যান।
দুপুর পৌনে ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার নেতৃত্বে আইন বিভাগের শিক্ষকরা ঘটনাস্থলে আসেন। উপ-উপাচার্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে তারা মহাসড়ক অবরোধ তুলে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে দাবি জানাতে থাকেন। এ সময় উপ-উপাচার্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। উপ-উপাচার্য তাদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে তারা প্রশাসন ভবনের সামনে এসে ফটকে তালা লাগিয়ে আন্দোলন শুরু করেন।
মারধরের বিষয়ে কথা বলার জন্য এনামুল জহিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ব্যানার নিয়ে আসার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তারা আশ্বস্তও হয়েছে। কিন্তু মহাসড়ক ছেড়ে ভেতরে আসছে না। আমি ক্লান্ত, তাই ব্যানার নিয়ে চলে এসেছি। এর বেশি কিছু নয়। ’
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই আছি। তাদেরকে আশ্বস্ত করে আন্দোলন শেষ করার জন্য বলছি। তাদের দাবিগুলো আমরা যথাসম্ভব পূরণের চেষ্টা করবো- এই আশ্বাস দেওয়ার পর তারা মহসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮
এসএস/জিপি