ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ধারাবাহিকতায় থাকতে চায় নীল, পরিবর্তনে মরিয়া সাদা দল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৮
ধারাবাহিকতায় থাকতে চায় নীল, পরিবর্তনে মরিয়া সাদা দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা পাদদেশ/ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যকর পরিষদ নির্বাচন-২০১৯ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর)। নির্বাচনে বরাবরের মতো এবারো লড়ছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল ও বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সাদা দল। 

দেশ সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এ নির্বাচনে বরাবরই বাড়তি নজর রাখে রাজনৈতিক দলগুলো। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন ভিন্নমাত্রা পেয়েছে।

 

মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব ভবনে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন সামনে রেখে নিজ নিজ প্যানেল নিয়ে ভোটারদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন প্রার্থীরা।

নির্বাচিত হওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকদের কল্যাণে কাজ করার প্রতিশ্রুতি এবং ইতোমধ্যে নেওয়া পদক্ষেপ ভোটারদের সামনে তুলে ধরে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ধারাবাহিকতা এবারো ধরে রাখতে চাইছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল পরিবর্তনের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনার রসায়ন বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ চৌধুরী জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। এবারও বামপন্থিদের গোলাপি দল থেকে ব্যাক্তিগত বা দলগতভাবে কোনো মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়নি। সে হিসেবে নীল ও সাদা মিলিয়ে ১৫টি পদের ৩০ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। ভোটার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৯৭ জন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে দু’দলের প্রার্থীরা শিক্ষকদের কাছে যাচ্ছেন। অনুষদভিত্তিক দলের মিটিং হচ্ছে প্রায়ই। সবাই নির্বাচিত হলে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরছেন। নীল দল প্রচারণায় মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রাখা; নতুন গবেষণা প্রকল্প চালুর ব্যবস্থা করা; অনুষদভুক্ত জার্নালগুলো অধিকতর মানসম্মত করা; বঙ্গবন্ধু স্কলারশিপ-এর আওতায় স্বল্প মেয়াদে সিনিয়র শিক্ষকদের জন্য পোস্ট-ডক্টরেট গবেষণা বৃত্তি চালু; উচ্চশিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে চলমান ‘প্রধানমন্ত্রী স্কলারশিপ’-এ শিক্ষকদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানো এবং বৃত্তিপ্রাপ্তির ব্যবস্থা করা; শতবর্ষপূর্তি সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিশেষ মর্যাদা অর্জন’ প্রাপ্তির বিষয় নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

অপরদিকে সাদা দল শিক্ষকদের সময়মতো পদোন্নতি, স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রবর্তন, আবাসিক সমস্যার সমাধান, বাড়িভাড়া সংক্রান্ত বৈষম্য অবসান, সরকারি প্লট বরাদ্দ, চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি, ট্যাক্সের জটিলতা নিরসন ও পারিতোষিক ও ভাতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিগত চার বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে নীল দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আসছে। কার্যকরী পরিষদ-২০১৮ তে ১টি পদ ছাড়া সব, ২০১৭ তে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল, ২০১৬ তে ১টি পদ ছাড়া সব, ২০১৫ তে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে জয় লাভ করে নীল দল। অন্যদিকে ভোটার সংখ্যা প্রায় দু’হাজার হলেও নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন দেড়হাজার মতো শিক্ষক। তার মধ্যে প্যানেল হিসেবে ভোট রয়েছে নীল দলের ৬০০-৬৫০ ও সাদা দলের ৪০০-৪৫০ ভোট।

এবার নীল দল থেকে সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি ও আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। গতবারের নির্বাচনে দল ও ব্যক্তি জনপ্রিয়তায় নীল দল থেকে সর্বোচ্চ ৯৪৯ ভোট পান তিনি।  

অন্যদিকে সাদা দলের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম পান ৪৭৭ ভোট। তবে এবার সাদা দল থেকে নির্বাচন করছেন দলটির আহ্বায়ক মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খান।

সাধারণ সম্পাদক পদে নীল দলের বিজনেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও সাদা দলের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক লুৎফর রহমানের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। কারণ গতবার নির্বাচনে সভাপতি পদে বিশাল ব্যবধানে নীল দল জিতলেও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র ২৮। তাই এবারও এমনটাই হতে পারে।

নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশার কথা বলতে গিয়ে নীল দলের সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু ওভারসিস স্কলারশিপ চালু, ঢাবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য জমি, গৃহ ঋণ, টিচার্স অ্যালাউন্স ও রিসার্চ অ্যালাউন্স বাড়ানোর কারণে শিক্ষক সমিতির দক্ষতা প্রতীয়মান হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ঢাবির শিক্ষকরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুকূলে শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের প্যানেলকে জয়ী করবে এটাই প্রত্যাশা। দেশের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তারা রায় দেবে।

সাদা দলের সভাপতি পদ প্রার্থী অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলছি। অন্যবারের চেয়ে আমরা বেশি সাড়া পাচ্ছি। আমার তাদের কাছে তুলে ধরছি শিক্ষক সমিতির মূল কাজ শিক্ষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় দেখা, আমাদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা, সহকর্মীদের বিপদে দাঁড়ানো, একইসঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সম্পর্ক ভালো রাখা। সবাই অনুভব করছে এখানে পরিবর্তন হওয়া দরকার। সে লক্ষ্য সবাই ভোট দেবে।  

নীল দলের প্যানেল 
সহ-সভাপতি পদে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক; কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ; যুগ্ম-সম্পাদক পদে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তাজিন আজিজ চৌধুরী; সদস্য পদে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন, লেদার অ্যান্ড টেকনোলজি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিউটিটের অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ,অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিয়াউর রহমান, খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর দে।

সাদা প্যানেল
সহ-সভাপতি পদে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, কোষাধ্যক্ষ পদে একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মহব্বত আলী, যুগ্ম-সম্পাদক পদে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন, সদস্য পদে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন ড. মো. হাসানুজ্জামান, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম শহিদুল ইসলাম, পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার বড়ুয়া, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, ড. মো. আবদুল করিম, আইইআর এর সহযোগী অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসেন (সম্রাট), ফার্মাসিউটিক্যাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস-আল-মামুন, গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইসরাফিল প্রাং (রতন), ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আমিন এবং প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভারে অধ্যাপক ড. লায়লা নূর ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৮
এসকেবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।