ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

এবার আশা জেগেছে রাকসু নির্বাচন নিয়েও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯
এবার আশা জেগেছে রাকসু নির্বাচন নিয়েও রাকসু ভবন।

রাজশাহী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ শুরুর পর এবার অচল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন নিয়েও আশার সঞ্চার হয়েছে। দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে অচল থাকা রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় সচলের দাবি জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। 

ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এতদিন নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে আসলেও কার্যত চুপ থেকেছে। সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর নতুন করে এ বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

রাকসু নির্বাচনের বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, রাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিবাচক চিন্তা করছে। তবে এক্ষেত্রে ছাত্রদের এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্ররা আগ্রহী হলেই কর্তৃপক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করবে। এজন্য ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে সংলাপে বসবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুস সোবহান বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে, এটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন রাকসু অচল থাকায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলার ও নতুন নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ছাত্ররা যদি আগ্রহী হয়, তবে প্রশাসনের কোনো আপত্তি নেই। প্রশাসন এ বিষয়ে পজিটিভ। রাকসু নির্বাচনের বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে। তারা যদি সত্যিকার অর্থে আগ্রহী হয়, তাহলে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

উপাচার্য আরও বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনা করা হবে। যদি তারা চায়, আর সেই পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে নির্বাচন দিতে প্রশাসনের কোনো আপত্তি নেই।

১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে। ওই সময় এর নাম ছিল রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাসু)। মাঝখানে আইয়ুব খানের শাসনামলে এর কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর ১৯৬২ সালে এটি যাত্রা শুরু করে রাকসু নামে। এখন পর্যন্ত ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে সামরিক শাসনামলে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল এই ছাত্র সংসদের নির্বাচন। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের জন্য।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্য ড. মলয় ভৌমিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার ত্রিমুখী ধারা রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে একাডেমিক কার্যক্রম এবং সেটাকে ফলপ্রসু করার জন্য শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা। এর ফলে শিক্ষা চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ না থেকে সমাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়। আর সমাজ ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা তৈরী হয় রাকসুর মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ত্রিমুখী ধারার মধ্যে কেবল একাডেমিক কার্যক্রম বজায় রয়েছে কিন্তু অন্য দুটি বন্ধ। এ দুটি ধারা না থাকায় শিক্ষা সমাজ ও সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম রাজনৈতিক সংগঠনগুলো নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করলেও মূলত ক্ষমতাসীন দলের অনুগত ছাত্র সংগঠনের সদিচ্ছার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচনে আগ্রহী হয় না। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে একক আধিপত্য ধরে রাখতে নির্বাচন চায় না।

এদিকে, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ঠিক রেখে মেধাবী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে দ্রুত রাকসু নির্বাচন দেওয়ার দাবি করছেন ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। বিশেষ করে ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর নেতারা আবার নড়েচড়ে বসেছেন। তারা নতুন করে আন্দোলনের বিষয়েও ভাবছেন।  

রাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এ এম শাকিল বলেন, ডাকসু নির্বাচনের তোড়জোড় শুরুর পর থেকেই আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও একই দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা রাকসু আন্দোলন মঞ্চ গঠন করেছিলাম। কিন্তু তখনো এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তৎপরতা লক্ষ্য করিনি। তারা এখন আশ্বাস দিলেও প্রকৃতপক্ষে আগ্রহী কি না এ নিয়ে আমরা সন্দিহান। এজন্য প্রশাসনকে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে।

রাবি ছাত্র ফেডারেশনের নেতা সুমন মোড়ল বলেন, যতবারই প্রশাসনকে বলেছি, ততবারই তারা আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ও দেশের নেতৃত্ব গঠনে রাকসুর বিকল্প নেই। তাই আমরা রাকসু চাই। এজন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

রাবি ছাত্রদলের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সমান অধিকার নিশ্চিত করে দ্রুত রাকসু নির্বাচন দেওয়া হোক। আমাদের প্রত্যাশা ডাকসু ও রাকসু নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, রাকসু  নির্বাচন আমরা চাই। আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে স্মারকলিপিও দিয়েছি। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবার উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলবো।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯ 
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।