জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানা নিয়মের বেড়াজালে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও ২০১৮ সালের সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছেন না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এজন্য শিক্ষার্থীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
তাদের দাবি, করোনাকালে নিয়ম শিথিল করে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হোক। যেন অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীরা বৃত্তির টাকা দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা করতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তির ফলাফল প্রকাশের ছয় মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। অন্যথায় শিক্ষাবৃত্তির সেই টাকা পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারে জমা হবে।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বাড়িতে অবস্থান করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে নাগাদ খুলতে পারে এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। তাই এই মুহূর্তে সম্পূরক বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করলে অনেক শিক্ষার্থীই তাদের বৃত্তির টাকা তুলতে পারবে না। সেটা আবার বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারে জমা পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি শাখা।
উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক চতুর্থ বর্ষ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক তৃতীয় বর্ষ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষ ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক প্রথম বর্ষের ফলাফলের ভিত্তিতে সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তির তালিকা তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে সেই পরীক্ষাগুলোর ফলাফলগুলো না দেওয়ায় শিক্ষাবৃত্তির ফলাফল তৈরি করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শাখাটির।
তবে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তালিকা করা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি ও নিয়মের বেড়াজালে এ ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে না।
উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি শাখার এক কর্মকর্তা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ছয় মাসের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তির টাকা উত্তোলন না করলে তা পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা হবে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে থাকায় এ টাকা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ১০টি, তৃতীয় বর্ষের তিনটি ও দ্বিতীয় বর্ষের অন্তত দুটি বিভাগের পরীক্ষার ফলাফল এখনো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে জমা পড়েনি। বিভাগগুলোর উদাসীনতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। বিভাগগুলো যথাসময়ে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে ফলাফল তৈরি করলে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফলাফল পাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ফরিদ আহমদ বলেন, বিভাগগুলো থেকে পরীক্ষার ফলাফল হাতে আসলে আমরা দুই থেকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তা প্রকাশ করি। আমরা এখনো ২০১৮ সালের কয়েকটি বিভাগের একাধিক বর্ষের ফলাফল হাতে পাইনি। ফলাফল হাতে পাওয়া মাত্র আমরা তা উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি শাখায় পাঠাবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইফরান আজিজ বলেন, করোনাকালে অনেক শিক্ষার্থীই পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের তালিকা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই কার্যক্রম তালিকা করা পর্যন্তই রয়ে গেছে। অথচ শিক্ষার্থীদের তাদের প্রাপ্য অধিকার সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
জানা যায়, করোনাকালে সপ্তাহে মাত্র দুদিন প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু থাকে। আর সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য বিভাগের সভাপতি ও হলের প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দাবি, অনলাইনের মাধ্যমে সম্পূরক শিক্ষাবৃত্তির টাকা উত্তোলন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া ছয় মাসের মধ্যে টাকা উত্তোলনের যে নিয়ম রয়েছে সেটা এবছরের জন্য শিথিল করে শিক্ষার্থীদের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে টাকা উত্তোলন না করলে সেটা পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারে জমা হবে- এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই বলে কম্পট্রোলার অফিস থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, শিক্ষার্থীরা যে সময়ই আবেদন করবে তখনই তারা তাদের শিক্ষাবৃত্তির টাকা তুলতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২০
এইচএডি