ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

মনোবিকৃতির কারণে বাড়ছে ধর্ষণ-হত্যা

সাজ্জাদুল কবির, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২১
মনোবিকৃতির কারণে বাড়ছে ধর্ষণ-হত্যা প্রতীকী ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: দেশে প্রতিদিনই ঘটছে ধর্ষণ। পাষণ্ডরা অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষণ শেষে নির্যাতনের শিকার নারীকে নৃশংসভাবে হত্যা করছে।

ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে অনেকে অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। এসব অপরাধে যুক্তদের একটি অংশ শিক্ষার্থী। সম্প্রতি রাজধানীর মাস্টারমাইন্ড স্কুলের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার পর সংশ্লিষ্ট মহলে ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে।

সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা এসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কারণ বিশ্লেষণে মনোবিকৃতির বিষয়টিকে সামনে এনেছেন। তাদের মতে, এসব ভয়াবহ অপরাধ বন্ধে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বড় একটি ভূমিকা রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশটা ছোট কিন্তু জনসংখ্যা অনেক বেশি। আইন আছে, প্রয়োগ নেই, আইনের শাসন নেই। সব ধরনের আইন আছে কিন্তু সেভাবে প্রয়োগ নেই। আইন প্রয়োগের সাথে যুক্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সীমাবদ্ধতাও আছে। রাজনৈতিক প্রভাব আছে। এসব আইনের প্রয়োগ নেই বলে সমাজে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে, সামাজিক নিরাপত্তা নেই। মূল্যবোধ নেই কোনো পেশাতে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈততিকভাবে প্রভাবশালীরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় সবকিছু।

অপরাধ সংঘটনের কারণ বিশ্লেষণে এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, মানুষের আচার-আচরণ তার বেড়ে ওঠার ওপর নির্ভর করে। পরিবার হচ্ছে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পিতামাতাকে সন্তানকে বয়স অনুপাতে বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করতে হবে, যাতে ভালোমন্দ যাচাই করে চলতে পারে। এছাড়া বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মুল্যবোধ চর্চার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে এসব অপরাধ বন্ধ হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ১৮ বছরের নিচে হলে এসব অপরাধ কিশোর অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। এতে পানিশমেন্ট হয় না। সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। তবে আমাদের দেশে সংশোধনাগার অপ্রতুল। দেশে মাত্র চারটি সংশোধনাগার রয়েছে।

এই অপরাধবিজ্ঞানী আরও বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়নে মানুষ ও সমাজের মধ্যে পরিবর্তন আসে। জীবনাচারে ছন্দপতন ঘটে। এটা প্রাকৃতিকভাবে ঘটে। বর্তমানে ‘গ্যাং কালচার’ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে। এসব অপরাধের সঙ্গে ড্রাগের সংযোগ রয়েছে।

এ সমস্যা সমাধানের উপায় প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, সমাজের ভেতর থেকে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। বর্তমানে আধুনিক সমাজব্যবস্থায় আমাদের প্রথাগত অনেক প্রতিষ্ঠানে ভাঙন ধরেছে। যেমন পরিবারের পরিবর্তে ডে-কেয়ার সেন্টার গড়ে উঠেছে। এখানে সুন্দর কালচারাল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা এটাচমেন্ট, ইনভলমেন্ট ও কমিটমেন্ট রাখতে পারি। সংশোধনাগারে কাউন্সেলিং করাতে পারলে অপরাধ কমে আসবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, মনোবিকৃতির কারণে অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের বর্তমান প্রজন্ম আবেগ তাড়িত হয়ে অনেক ভুল করছে। সম্পর্কের শুরুতে মেয়েদের একটু অনীহা থাকে, একটা পর্যায়ে মেয়ে রাজি হলে ছেলেরা সুযোগ নেয়। তখনই এসব ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ ঘটছে। গত বিশ বছরে সামগ্রিকভাবে আমাদের মূল্যবোধের অনেক অধঃপতন হয়েছে। অনেক সময় দলবেঁধে ধর্ষণ করছে, যদি প্রকৃতই ভালোবাসতো এই জঘন্য কাজ করতো না। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২১
এসকেবি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।