ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে রাবি শিক্ষকদের কাদা ছোড়াছুড়ি

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২২
প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে রাবি শিক্ষকদের কাদা ছোড়াছুড়ি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাজশাহী): রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষকদের নামে একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠছে। সম্প্রতি (১৬ ফেব্রুয়ারি) ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রশ্ন ফাঁস করেন ওই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ইসতিয়াক হোসাইন।

এর রেশ না কাটতেই অভিযুক্ত এই অধ্যাপক বিভাগের আরেক সহযোগী অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেনের নামে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ এনেছেন। শিক্ষকদের এমন ব্যক্তিগত আক্রোশে বিভাগের সুনাম নষ্ট এবং একাডেমিকভাবে শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে মনে করছেন সিনিয়র শিক্ষকরা।

তারা বলছেন, যদি ক্লাসে আলোচ্য প্রশ্নের সঙ্গে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্ন মিলে যায় তাহলে প্রশ্নকরণ ও পরীক্ষণ পদ্ধতিটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ফেসবুক স্টোরিতে প্রশ্ন প্রকাশ করা এবং পরীক্ষার আগে ক্লাসের মধ্যে প্রশ্ন বলে দেওয়া খুবই স্পর্শকাতর ও লজ্জাজনক। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন, কোনো স্কুলেও হওয়া উচিত না। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্টের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়গুলো তুলে ধরে সুষ্ঠু তদন্ত করা দরকার। তাছাড়া অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

জানা যায়, ফিশারিজ বিভাগের এই দুই শিক্ষকের একজন আওয়ামীপন্থী হলুদ প্যানেল ও আরেকজন বিএনপি-জামাতপন্থী সাদা প্যানেল থেকে ফিশারিজ অনুষদের ডিন পদে নির্বাচন করেন। আর এই নির্বাচন ঘিরে ও ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে তারা এমন কাদা ছোড়াছুড়ি করছেন বলে ধারণা করছেন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফিশারিজ অনুষদের নির্বাচিত ডিন ও বিভাগের অধ্যাপক ইসতিয়াক হোসেনের (আওয়ামীপন্থী প্যানেল) ফেসবুক স্টোরিতে মাস্টার্স পরীক্ষার এফএমএমসি-৬৪১ কোর্সের প্রশ্নপত্রটি দেখা যায়। এ ঘটনায় পরীক্ষা স্থগিত করে পরীক্ষা কমিটি। এরপর একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন (বিএনপি-জামাত সমর্থিত প্যানেল) সাজেশনের নামে চূড়ান্ত পরীক্ষার আগেই এক কোর্সের প্রশ্নপত্র অনলাইন ক্লাসে কিছু শিক্ষার্থীর কাছে শেয়ার করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ফলে ওই পরীক্ষা বাতিল চেয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন করেছেন এর আগে প্রশ্ন ফাঁসে অভিযুক্ত অধ্যাপক মো. ইসতিয়াক হোসাইন।

এ বিষয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকিব বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণ হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রশ্ন ফাইনাল করার আগে মডারেশন করা হয়। মডারেশন করা প্রশ্নটি আগের কোনো বছরের পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে মিলে গেলে এই দায়ভার কিন্তু মডারেশন বোর্ডেরও নিতে হবে।

ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক খারাপ কেন, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। দ্রুত এমন সমস্যার সমাধান না হলে আগামীতে সমস্যা বাড়তে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহযোগী অধ্যাপক ইয়ামিন হোসেন বলেন, আমাদের মতাদর্শ ও নির্বাচনের ফলাফলে কোনো সমস্যা নেই। আমার নামে অভিযোগ আসলে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সুনাম নষ্টের জন্য করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের ধারণা দিতে বিগত বছরের প্রশ্ন দেখিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে প্রশ্নগুলোর স্ক্রিনশট প্রচার করা হয়েছে, আমি সেগুলো পড়াই না। আর এটি ২০১৮ সালের জুন মাসের প্রশ্নপত্র। শিক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রের ধারণা নিতে চাওয়ায় আমি আগের বছরের প্রশ্ন থেকে তাদের ধারণা দিয়েছি। এছাড়া প্রশ্নপত্র মডারেশনের পর মডারেটর ইসতিয়াক আহমেদ এমন প্রশ্ন তোলেন কীভাবে?

এ বিষয়ে অভিযোগকারী অনুষদ অধিকর্তা অধ্যাপক ইসতিয়াক হোসাইন বলেন, আসলে বিভাগের প্রশ্নপত্রের মডারেশনের যে গাফিলাতি সেটি রোধ করার জন্য আমি আগে ছবি তুলেছিলাম। যেটি ভুলবশত ফেসবুকে শেয়ার হয়ে যায়। এই ভুলের জন্য আমি শাস্তি পেতে রাজি আছি। কারণ আমার উদ্দেশ্য ছিল ভালো কিছুর।

অধ্যাপক ইসতিয়াক হোসাইন বলেন, ইয়ামিনের সঙ্গে আমার এখনও ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু অভিযোগের পর থেকে হয়তো অনেকে ভিন্ন কিছু ভাবছে। তবে আমি মূলত বিভাগের প্রশ্নপত্র মডারেশনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এমন অভিযোগ করেছি।

বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মঞ্জুর আলম বলেন, এসব ঘটনায় আমি মর্মাহত হয়েছি। এতে নিজেদের বিভাগের মান-সম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যদিও প্রশ্নপত্রের বিষয়ে আমার করার কিছু নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠানো হবে। তারপর নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জনসংযোগ দপ্তর থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, ২মার্চ, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।