ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

খুবিতে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মক ট্রায়ালের সমাপনী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২২
খুবিতে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মক ট্রায়ালের সমাপনী

খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) আইন ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় মক ট্রায়াল সমাপনীপর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (০৯ এপ্রিল) দুপুরে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান।

তিনি বলেন, গত দুই শতাব্দী ধরে দেশে আইনের ধারা ধীরে ধীরে বিকশিত হচ্ছে। বাস্তবে অনেক বিদেশি এবং প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে আইনি শিক্ষার মান উন্নত পর্যায়ের নয়। দেশের পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন স্কুলগুলো ও অন্যান্য ল কলেজ তাদের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞান এবং পেশার দক্ষতা যেমন- গবেষণা, খসড়া তৈরি, অ্যাডভোকেসি দক্ষতা, ক্লায়েন্ট ম্যানেজিং ও ইন্টারভিউয়ের দক্ষতা প্রকাশ করতে অনেকাংশে ব্যর্থ হচ্ছে। ২০০৬ সালে আইন কমিশন ‘বাংলাদেশে আইনি শিক্ষার পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আইন স্কুলগুলোকে ব্যবহারিক দক্ষতা না শেখানোর জন্য এবং বিশ্লেষণের শিক্ষাকে সম্পূর্ণরূপে একীভূত করতে ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা করেছে।

তিনি আরো বলেন, ক্লিনিক্যাল আইনি শিক্ষা জ্ঞান, ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক ন্যায়বিচার প্রচার করে। তত্ত্ব এবং অনুশীলনের মধ্যে ব্যবধান দূর করার জন্য এই শিক্ষা প্রয়োজন। ক্লিনিক্যাল আইনি শিক্ষা হলো আইনি শিক্ষা পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যেটিতে মূলত মুট-কোর্ট, মক ট্রায়াল, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এবং পাবলিক আইনি শিক্ষার মাধ্যমে ব্যবহারিক আইনি প্রশিক্ষণ জড়িত। উন্নত দেশগুলোতে ইতোমধ্যে ক্লিনিকাল আইনি শিক্ষা চালু হয়েছে।

বিচারপতি বলেন, বৈশ্বিক অগ্রগতির সঙ্গে আইনি শিক্ষার মান উন্নত করা বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হিসেবে রয়েছে- প্রচলিত শিক্ষার পদ্ধতি এবং পাঠ্যক্রম কম-ব্যবহারিক অন্তর্নিহিততা, গবেষণা করার অপর্যাপ্ত অভিমুখীতা, ক্লিনিক্যাল আইনি শিক্ষার সীমাবদ্ধতা, আইনি সমস্যা বোঝার নির্দিষ্ট শিক্ষাবিদ্যা এবং আন্তঃবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আইনি সমস্যাগুলো উপলব্ধি করার অ-জনপ্রিয়করণ।

তিনি বলেন, আইনের সব শিক্ষার্থী আইনজীবী হবেন, এটা বাধ্যতামূলক নয়। আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বিকল্প আইনি পেশাগুলোতে দ্রুত জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আইনজীবীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং যোগ্যতা থাকায় বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি, এনজিও, পাবলিক কর্পোরেশন, বিদেশি দূতাবাস, জাতিসংঘ মিশন বা জাতিসংঘ সংস্থায় কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে আইন পাস করা যেকোনো শিক্ষার্থী নিম্ন বিচার বিভাগ/বিজেএস বা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে পারে। যারা আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন তারা বেঞ্চ এবং বার উভয় ক্ষেত্রেই আইনি পেশাদার হিসাবে কাজ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা। তিনি বলেন, এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের আইনি শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহারিক জ্ঞানের মতো কাজে লাগবে। ফলে তারা ভবিষ্যতে দক্ষ পেশাজীবী হিসেবে তৈরি হতে পারবে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো.  ওয়ালিউল হাসানাত। আরো বক্তব্য রাখেন রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খোকন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পিস কনসোর্টিয়ামের পরিচালক শাহাদত হোসেন বাচ্চু। সমাপনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইন ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক পুণম চক্রবর্তী। এ সময় ডিসিপ্লিনের অন্যান্য শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সমাপনী অনুষ্ঠানের পর একটি মামলার মক ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সেরা অ্যাডভোকেট হিসেবে ৩ জন ও সেরা স্বাক্ষী হিসেবে ১ জনকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এছাড়া অংশগ্রহণকারী ৪৫ জন শিক্ষার্থী ও আইনের ৬ জন শিক্ষককে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তর ও পিস কনসার্টিয়াম এই মক ট্রায়াল অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতা করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২২
এমআরএম/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।