ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শ্রমিকদের নিরাপত্তা ছাড়াই শাবিপ্রবিতে চলছে নির্মাণ কাজ!

হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২
শ্রমিকদের নিরাপত্তা ছাড়াই শাবিপ্রবিতে চলছে নির্মাণ কাজ!

শাবিপ্রবি (সিলেট): শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) চলছে কয়েকটি বহুতল ভবনের নির্মাণের কাজ। এসব ভবনে কাজ করছেন শতাধিক নির্মাণ শ্রমিক।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই কাজ করছেন তারা। তবে তাদের এ চিত্র দেখার কেউ নেই!

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২’শ কোটি ৩৮ লাখ টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প-১ এর অধীনে ৫তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন ডি এর এক্সটেনশন, ৪তলা আইআইসিটি ভবনকে ১০তলা ভবনে ঊর্ধ্বমুখী বর্ধিতকরণ, ৪তলা সেন্টার অব এক্সিলেন্সের ভবন ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ছাত্রী হল, ২তলা বিশিষ্ট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওয়ার্কশপসহ কয়েকটি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এছাড়া ৯৮৭ কোটি টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প-২ এর অধীনে একাধিক প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান প্রকল্পগুলোতে কোনো নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন শ্রমিকেরা।  

কারোই হেলমেট, গামবুট, বেল্ট, হ্যান্ড গ্লাভস কিংবা নিরাপত্তা সামগ্রী। এমনকি বহুতল ভবনের উঁচুতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা না নিয়ে ঝুলে ঝুলে কাজ করছেন অনেকে। অথচ বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোডে বলা হলেছে, নির্মাণ কাজ চলাকালীন শ্রমিকদের অবশ্যই মাথায় হেলমেট, সেফটি বেল্ট, ঢিলেঢালা পোশাক ব্যবহার করতে হবে।

তাছাড়া কোন ভবনের নির্মাণ কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চারপাশে জাল কিংবা টিন দিয়ে গিরে রাখতে হবে।  

জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্যও বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোডে নির্দেশনা রয়েছে। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ নির্মাণ কাজে এমন ব্যবস্থাও দেখা মেলেনি। যদিও এখনো পর্যন্ত বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি, তবে এমন পরিস্থিতিকে কাজ করলে শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  

তরিকুল ইসলাম সাকিব নামে এক শ্রমিককে কোনো ধরনের নিরাপত্তা না নিয়ে আইআইসিটি ভবনের ৮ম তলায় পিলার ঢালাইয়ের কাজ করতে দেখা গেছে। কেন তিনি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে কাজ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ কাজে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি, তাই আমাদের নিরাপত্তা সামগ্রীর প্রয়োজন হয় না। এগুলো পরে কাজ করা একটা ঝামেলা! তাই পরা হয় না।

একই কথা জানিয়েছেন বিভিন্ন ভবনের একাধিক নির্মাণ শ্রমিক। তারা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, মালিক পক্ষ থেকে হেলমেট, বুটজুতা সব দেওয়া হয়েছে। এগুলো পরে কাজ করলে মাথাব্যথা করে, তাই এগুলো না পরে সবাই ফেলে রাখে!  

আইআইসিটি বিল্ডিংয়ের দায়িত্বে থাকা সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. মামুন বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমিকরা নিরাপদে কাজ করতে কোম্পানি থেকে তাদের নিরাপত্তা সামগ্রী দেওয়া হয়। তবে তারা সেগুলো ব্যবহার না করে যত্রতত্র ফেলে রাখেন। কেউ দুর্ঘনার শিকার হলে বা মারা গেলে, ঠিকই সবাই হেলমেট, গামবুট, সেফটি বেল্ট পরবেন।  

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কাজ দেওয়ার সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি অবগত করা হয়। তবে কাজ চলাকালীন কোনো শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়টি এড়িয়ে গেলে আমরা তাদের সতর্ক করে দেব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখি না। আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ দিয়ে দেই, তারা আমাদের কাজ বুঝিয়ে দেয়। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব।  

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ 
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।