ঢাকা, বুধবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২, ০৭ মে ২০২৫, ০৯ জিলকদ ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

এনআইডি জালিয়াতি রোধে কোনো প্রতিষ্ঠানকে ঢালাও তথ্য দেবে না ইসি

ইকরাম-উদ-দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:২১, মে ৬, ২০২৫
এনআইডি জালিয়াতি রোধে কোনো প্রতিষ্ঠানকে ঢালাও তথ্য দেবে না ইসি

ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তথ্যভাণ্ডারের সুরক্ষা নিশ্চিত ও জালিয়াতি রোধে, সেবাদাতা কোনো প্রতিষ্ঠানকে আর ঢালাও তথ্য দেবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে কেবল তথ্যের সঠিকতা আছে কিনা তা যাচাই করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ‘মিলেছে’ অথবা ‘মেলেনি’ আকারে জানিয়ে দেবে।

ইসি সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এনআইডির ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি ১৮৬টি প্রতিষ্ঠান নাগরিকদের বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে, যাদের ‘সার্ভিস পার্টনার’ বলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে ব্যাংক, বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল অপারেটর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় রয়েছে।

এনআইডির তথ্য নির্ভরযোগ্যতা অর্জনের পর, গত এক দশকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিকের তথ্য যাচাই করতে ইসির সঙ্গে চুক্তি করে। সেবাগ্রহীতার পরিচয় নিশ্চিতে এসব প্রতিষ্ঠান ইসির সার্ভার থেকে তথ্য যাচাই করে থাকে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি যাচাইয়ে ২ টাকা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ৫ টাকা করে ফি দিয়ে থাকে।  

ইসি কর্মকর্তারা জানান, এই সেবাটি এনআইডি সার্ভার থেকে একটি নির্দিষ্ট লিংকের মাধ্যমে দেওয়া হয়। কোনো এনআইডি নম্বর সার্ভারে পাঠানো হলে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ছবিসহ তথ্য চলে আসে। এই সুযোগেই তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে।

২০২৩ সালের ৬ জুলাই মার্কিন ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চ দাবি করে, বাংলাদেশের একটি সরকারি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকদের তথ্য ফাঁস হয়েছে। এতে নাগরিকের পুরো নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল, ঠিকানা এবং এনআইডি নম্বর উন্মুক্ত ছিল বলে জানায় তারা।

ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ইসি। তারা দাবি করে, ইসির সার্ভারে কোনো ত্রুটি নেই এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরবর্তীতে তথ্য ফাঁসের সত্যতা সার্ভিস পার্টনারদের দিক থেকেই পাওয়া যায়।

চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ইসি সচিব আখতার আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, পাঁচটি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো—স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং অর্থমন্ত্রণালয়ের iBAS। এসব প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে দেখা হবে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যতটুকু তথ্য নিচ্ছে, ততটুকু প্রয়োজন কি না।

পর্যালোচনার পর ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সার্ভিস পার্টনারদের আর ঢালাও তথ্য দেওয়া হবে না। তারা কেবল আট ধরনের তথ্য যাচাই করতে পারবে।

সার্ভিস পার্টনাররা যেসব তথ্য চাইবে, এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ, নাম (বাংলা ও ইংরেজি), পিতার নাম, মাতার নাম, স্বামী/স্ত্রীর নাম এবং ঠিকানা (বিভাগ, জেলা, উপজেলা/থানা)-এসব তথ্যের ভিত্তিতে ইসি জানাবে ‘মিলেছে’ অথবা ‘মেলেনি’।

এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর বলেন, ঢালাও তথ্য না দিয়ে, কেবল যেটুকু তথ্য চাওয়া হবে সেটাই ‘হ্যাঁ/না’ আকারে যাচাই করে জানিয়ে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

এদিকে, এনআইডি বৈধতা ও সঠিকতা যাচাই শাখার সহকারী পরিচালক মুহা. সরওয়ার হোসেন সার্ভিস পার্টনারদের চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, সাইবার হুমকি মোকাবিলা, তথ্যের অপব্যবহার রোধ ইত্যাদি বিবেচনায় এনআইডি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান পদ্ধতির পরিবর্তে ‘মিলেছে/মেলেনি’ পদ্ধতি চালু করতে নির্বাচন কমিশন নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এজন্য আগামী ১৫ মের মধ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

এনআইডি যাচাই: ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বাড়ছে

৫ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এনআইডি তথ্য ফাঁসের প্রমাণ পেয়েছে ইসি

ইইউডি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।