ঢাকা, বুধবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

জামানত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সৎ প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করবে

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:১০, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫
জামানত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সৎ প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করবে

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জামানত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের ভোটে আসতে নিরুৎসাহিত করবে। সবার জন্য সমান সুযোগও নিশ্চিত হবে না।

অন্যদিকে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ দেওয়ায় বাড়বে বিশৃঙ্খলা।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তাবে এমন আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিকরা।

নির্বাচনে একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোটের বিধান, ফেরারি আসীমের ভোটে অযোগ্য ঘোষণা, অনলাইনের পরিবর্তে সশরীরে প্রার্থী বা তার প্রস্তাবক বা সমর্থকের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিল, জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকাসহ ৪৫টির মতো বিধান সংশোধন করছে ইসি।  

সংশোধিত বিধান এরইমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্যও পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কোনো পর্যবেক্ষণ না এলে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। সেখানে অনুমোদন হলে অধ্যাদেশ আকারে সংশোধন হবে।

ইসির করা প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, নির্বাচন কমিশন যা করছে, আমরা তা জানি না। আমাদের কথা হলো আরপিও সংশোধন সব দলের সঙ্গে বসে মতামত নিয়ে করা উচিত।

‘না’ ভোটের বিধান নিয়ে তিনি বলেন, ‘না’ ভোট কেবল একক প্রার্থীর আসনে নয়, সব আসনে থাকতে হবে। কারণ ভোটারের তার আসনের নির্বাচন পছন্দ নাও হতে পারে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম বলেন, ‘না’ ভোট নিয়ে আমাদের অবস্থান আগের মতো। আমরা এরইমধ্যে আমাদের সুপারিশ জমা দিয়েছি।

ফেরারি আসামি ভোটে অযোগ্য, জামানত বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৫০ হাজার

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব হলো- নির্বাচনে না-ভোট বিজয়ী হলে সেই নির্বাচন বাতিল করা এবং পুনর্নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাতিল করা নির্বাচনে কোনো প্রার্থী নতুন নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারার বিধান করা।

রুহিন হোসেন প্রিন্স জামানত বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, জামানত বাড়ানো কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য না। কারণ আমরা যেটা বলেছি, এখন যে জামানত আছে, সেটা অনেক বেশি। যদি জামানত দিতেই হয় তাহলে আমাদের প্রস্তাব হলো যার যতো আয়, তার একটা পারসেন্টেজ দিতে হবে। কেননা, জামানত বাড়লে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে না।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম বলেন, অনেকে প্রার্থী আছে যারা সৎ প্রার্থী, যোগ্য প্রার্থী; জামানত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত তাদের ডিসকারেজ করবে।

এদিকে অনলাইনে মনোনয়নপত্র বাতিল করার সিদ্ধান্তে বিশৃঙ্খলা, মারামারির আশঙ্কা করছেন তারা। অনলাইনে মনোনয়নে বাধা সৃষ্টি র বিষয়টিও এড়ানো যায়।

কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারই সর্বেসর্বা

সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, নানা বিবেচনায় অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধান থাকা দরকার। কারণ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় যে শোডাউন হয়, সেগুলো এড়ানো যায়।

আব্দুল আলীম বলেন, আমরা বলেছিলাম, যারা ফেরারি আসামি নয়, তাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়টি অ্যাপ্লিকেবল হবে না। এখন যদি সবই নিয়ে থাকে... অনলাইন তো আসলে দরকারি জিনিস। কারণ হলো যে ট্রাভেল করতে পারেন না, আসতে পারেন না, বা অসুস্থ থাকতে পারেন প্রার্থী।  

তিনি বলেন, আরেকটি কারণ হলো মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় যে শোডাউন হয় এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে, মারামারি হতে পারে। কাজেই কেউ যদি মনে করেন যে, অনলাইনে দেবে, সেটা থাকাই ভালো। আরেকটা জিনিস হলো আমরা অতীতে দেখেছি, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় বাধা দেওয়া হয়। অনলাইন হলে সে সুযোগ থাকবে না। এইজন্যই আমাদের কাছে মনে হয়েছিল যে অনলাইন থাকা দরকার। সেই আঙ্গিকেই আমরা সুপারিশ করেছিলাম।

ভোটে ব্যয়সীমা বাড়ছে

অন্যদিকে ফেরারি আসামিকে ভোটের জন্য অযোগ্য ঘোষণার করার বিধানে গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। তবে এর সঠিক প্রয়োগের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

রুহিন হোসেন মনে করছেন, ফেরারি আসামি কে হবে, না হবে; এর একটি আইনগত বিষয় আছে। আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হলে প্রার্থিতা অযোগ্য হয়ে যায়, সেটাই রাখা উচিত। কোনো টাইটফিট কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কারো গণতান্ত্রিক অধিকার যেন খর্ব না করি সেদিকে বিবেচনা করেই আমাদের আরপিও সংশোধন করতে হবে।

তবে আব্দুল আলীম ফেরারি আসামিকে ভোটে সুযোগ না দেওয়ার পক্ষেই বলছেন। তার মতে, কেউ যদি আদালতে হাজির না হয়, তার মানে কি, বোঝাই যাচ্ছে যে সে অপরাধী। আদালতকে ফেস করছে না, আইন মানছে না; তার মানে ভয় পাচ্ছে। তাহলে ভোটের অধিকার কেন থাকবে? সে ধরা দিক। আইন অনুযায়ী যে ব্যবস্থা হওয়ার হবে। যদি আদালত মনে করে যে সে নির্বাচন করতে পারবে, তাহলে করবে। সে যেহেতু পালিয়ে বেড়াচ্ছে, ফেরারি, তার মানে তো সে ভয় পাচ্ছে। যে কারণে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, সেটা অনেকটাই সত্য। সে স্বীকার করে নিচ্ছে। আর আমরা তো আদালতের ঘোষিত ফেরারি আসামির কথা বলেছি। যেহেতু আদালতের মাধ্যমে ফেরারি ঘোষণার কথা বলা হয়েছে, সেক্ষেত্রে বৈষম্য হবে না।

ইইউডি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।