ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নৌকায় ভোট না দিলে ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিমু...

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২১
নৌকায় ভোট না দিলে ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিমু...

পটুয়াখালী: ভোটের বাকি দু’দিন। নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যেতে শঙ্কিত সাধারণ ভোটাররা।

ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও হুমকি বেড়েই চলছে। প্রচারণার সময় প্রকাশ্যেই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে অনেক প্রার্থীর সমর্থকদের। ভোটারদের ঠ্যাং ভেঙে দেওয়ার হুমিকও দেওয়া হচ্ছে। আর এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাধারণ ভোটাররা।  

গত ৪ নভেম্বর পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ও বকুলবাড়িয়া, ৫ নভেম্বর ডাকুয়া ও চরবিশ্বাস এবং ৬ নভেম্বর চরকাজল ইউনিয়নে কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে করে নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে চরকাজলের বিদ্রোহী ঘোড়া মার্কার প্রার্থীর সমর্থকরা গত ১ নভেম্বর একটি মানববন্ধন করেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইউনিয়নের সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আসন্ন দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনে গলাচিপা উপজেলার ৮টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে গলাচিপায় বিএনপি দলীয় কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি। আওয়ামী লীগ ৮টিতেই দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ৬টিতেই দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। এদেরকে যদিও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এবার গলাচিপার চরকাজল, চরবিশ্বাস, গলাচিপা সদর, পানপট্টি, ডাকুয়া, কলাগাছিয়া, বকুলবাড়িয়া ও গজালিয়ায় দ্বিতীয় ধাপের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে শুধু গলাচিপা সদর ও গজালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কোনও বিদ্রোহী প্রার্থী নেই।  

নির্বাচনী মাঠে ভোট যুদ্ধে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী শক্ত অবস্থানে থাকলেও সে অবস্থানকে দুর্বল করে দিয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা। আর এতে ৮টির প্রায় ৬টিতেই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিজয় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে করে অস্বস্তিতে রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
গলাচিপার চরকাজল ইউনিয়ন বরাবরই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়। দ্বিতীয়বারের মতো আবারও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান রুুবেল মোল্লা। অপরদিকে, দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থী চরকাজল সাংগঠনিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিন গাজী এবং চরকাজল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান মোল্লা। কিন্তু এবার এই দু’জন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় বিজয় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।  

অপরদিকে, দু’জন বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সাইদুর রহমান রুবেল। এ ইউনিয়নে উঠান বৈঠককে কেন্দ্র করে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গত শনিবার রাতে (৬ নভেম্বর) মুখোমুখি অবস্থান নেয় নৌকা মার্কার প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী দুই প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।  

এর আগে, গত ৪ নভেম্বর গজালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী খালিদুল ইসলাম স্বপন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান বিশ্বাসের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এখানেও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।  

একই দিন রাতে বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা মার্কার প্রার্থী আবু জাফর খান ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী  মো. শহিদুল ইসলাম হাওলাদারের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এতে নৌকা মার্কার প্রার্থীর উঠান বৈঠকে অংশ নেওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোলখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন হাওলাদার এ হামলার শিকার ও লাঞ্ছিত হন।  

এছাড়াও গত ৫ নভেম্বর ডাকুয়া ইউনিয়নে পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায় ও বিদ্রোহী প্রার্থী এডভোকেট মো. মামুন খানের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, মারামারি ও নৌকা মার্কার প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একই দিনে চরবিশ্বাস ইউনিয়নেও পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী তোফাজ্জেল হোসেন বাবুল মুন্সির সমর্থক ও বিদ্রোহী প্রার্থী মো. রাজা মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বক্ষম হয়।  

ডাকুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা মার্কার প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায় বলেন, আমি ও আমার কর্মীরা শঙ্কিত। বিএনপির মো. মিজানুর রহমানের আনারস ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এডভোকেট মামুন খানের ঘোড়া মার্কার কিছু লোক ৫ নভেম্বর আমার নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করে। ওই দিনই থানায় অভিযোগ দিয়েছি। ফুলখালী আনারস ও পাঙ্গাসিয়ায় ঘোড়া মার্কার সমর্থকরা প্রতিদিনই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়।  
একই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এডভোকেট মো. মামুন খান বলেন, মিথ্যা রটনা রটিয়ে নৌকা মার্কার প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায় ভোটারদের আতঙ্কিত করছে। ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে তিনি নানান অপকৌশল নিচ্ছেন। উল্টো নৌকার কর্মী-সমর্থকরা রাতের আধারে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাধারণ ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। এতে ভোটারা ভয়ে আছে। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে যেতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। এখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।  

চরকাজল ইউনিয়নের কপালবেড়া গ্রামের মো. সোহেল বলেন, নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা হুমকি-ধামকি দেয়। আমারে হুমিকি দিয়ে বলে, নৌকায় ভোট না দিলে ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিমু। এতো চাপের মধ্যেও আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।

এ প্রসঙ্গে চরকাজল ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকা মার্কার প্রার্থী সাইদুর রহমান রুবেল মোল্লা বলেন, আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীরা অপপ্রচার চালিয়ে সুবিধা নিতে চাচ্ছেন। নৌকায় ভোট না দিলে আমি বা আমার সমর্থকরা কোন ভোটরকে ঠ্যাং ভেঙে দিবে এ ধরণের কথা কাউকেই বলেনি। এ কথাগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

এ বিষয়ে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, বিচ্ছিন্ন যেসব ঘটনা ঘটেটেছে পুলিশ সাথে সাথে তার ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক দু'টি অভিযোগই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেহেতু প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে গলাচিপার ৪টি ইউনিয়নে কোন সমস্যা হয়নি। এবারও বাকি এ ৮টিতেও কোন কোন সমস্য হবে না বলে বিশ্বাস করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।