ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

সৈয়দপুর থেকে মফিজুল সাদিক

প্রার্থী-কর্মীর ঘুম হারাম, দলের কার্যালয়ই ঠিকানা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
প্রার্থী-কর্মীর ঘুম হারাম, দলের কার্যালয়ই ঠিকানা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে: দরজায় কড়া নাড়ছে পৌরসভা নির্বাচন। প্রচার-প্রচারণায় নতুন নতুন কৌশলে ব্যস্ত প্রার্থীরাও।

কর্মী সংগঠিত করে প্রচার-প্রচারণার সুবিধায় প্রার্থীরা অনেকেই থাকছেন দলের কার্যালয়ে।

ভোটের আগে দলীয় অফিসে টানা উপস্থিত থাকবেন বলে জানাচ্ছেন তার‍া। দলীয় অফিসেই বড় বড় ডেগচিতে রান্না হচ্ছে। খাওয়া-দাওয়া সেরে আবারও জনসংযোগে নামছেন মেয়র প্রার্থী ও তাদের সমর্থক কর্মীরা।

সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা, সঙ্গে ছড়াচ্ছেন রকমারি প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি।

নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভায় সরেজমিনে দেখা গেল- নগর পিতার আসন দখলে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা। প্রচারণা শেষে এক কাতারে কাঁথা, কম্বল ও বালিশ নিয়ে সারি করে ঘুমাচ্ছেন মেয়র-কর্মীরা।

এ পৌরসভায় ৮১ হাজার ৩৬৫ জনে মোট ভোটার ৪০ হাজার ৫১৩ জন। ভোটারদের মধ্যে উর্দুভাষী (বিহারি) ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার।

নৌকা ও ধানের শীষে প্রধান লড়াই হবে বলে ভোটাররা জানাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক সাখাওয়াৎ হোসেন খোকন যথারীতি নৌকা প্রতীক, বিএনপির প্রার্থী বর্তমান মেয়র বিএনপির রাজনৈতিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার ধানের শীষ, জাতীয় পার্টির প্রার্থী পৌর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন লাঙ্গল ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলের সৈয়দপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ নূরুল হুদা হাতপাখা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

শনিবার (১২ ডিসেম্বর) থেকে প্রার্থী ও দলের নেতা-কর্মীরা অফিসে রাত কাটাচ্ছেন বলে বাংলানিউজকে জানান তারা।

ঘুম হারাম হয়েছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক সাখাওয়াৎ হোসেন খোকনের।

বাংলানিউজকে এ প্রার্থী বলেন, চোখে আর ঘুম নাই, ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাতে তিন ঘণ্টাও ঘুমাতে পারি না। আওয়ামী লীগ শুধু না, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ ও সহযোগী অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদেরও একই অবস্থ‍া। আমার কর্মীরা ঘুমাতে পারছেন না।

তিনি আরও বলেন, পৌরসভায় সব জায়গায় যাচ্ছে দলের সবাই, আমার জন্য কাজ করছে। অনেকে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করছেন। আমার বিশ্বাস আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হব।

অভিযোগ করলেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে নিয়েও। তিনি বলেন, বর্তমান মেয়র  বিএনপির জন্য কাজ করেছেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করেননি। তিনি তিনবার মেয়র ছিলেন, কিস্তু পৌরসভার জন্য কোনো কিছুই করেননি। আমি বিজয়ী হলে পৌরবাসীর উন্নয়নের কাজ শুরু থেকে শুরু করবো।  

প্রচার-প্রচারণা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী বলেন, প্রতিদিন রুটিন মাফিক কাজ করছি। দলীয় অফিস থেকে নেতা-কর্মীদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

বসে নেই ধানের শীষের প্রার্থীও। বিএনপির প্রার্থী অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেনও শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) থেকে দলীয় অফিসকে বাসা-বাড়িতে রূপান্তর করেছেন। পৌর বিএনপির অফিসে কাঁথা-কম্বল নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন, সঙ্গে কর্মীদের শক্তি জোগাতে ভুড়িভোঁজের ব্যবস্থা তো রয়েছেই।

দলীয় অফিসে বসবাস প্রসঙ্গে এ প্রার্থী বলেন, পার্টি অফিসে নিজেরা রান্না করছি, খাচ্ছি। কর্মীরা যে যা পাচ্ছে তাই রান্না করছে। আমার কাছে সবাই নেতা। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি। আচরণবিধি মোতাবেক সকাল ৯টায় গণসংযোগ করছি, এরপর পার্টি অফিসে এসে ঘুমাচ্ছি।

পার্টি অফিসে মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে রাত যাপন করছেন বর্তমান মেয়রের কর্মী ফরিদ সরকার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নেতা (মেয়র প্রার্থী) পার্টি অফিসে থাকলে কর্মীরাও থাকে। নেতা অফিসে থাকায় আমরা সবাই তার সঙ্গে আছি। পৌরসভায় হেরে গেলে পার্টি অফিস থেকে বাড়ি যাবো, জিতে গেলে যাব পৌরসভায়।

আওয়ামী লীগ অফিসে নির্মিত নৌকা শোভা পাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি অফিস সেজেছে সত্যিকারের তাজা ধানের শীষে। নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার জন্য মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ঘুম হারাম হয়ে গেছে কর্মীদেরও।

আওয়ামী লীগের কর্মী সুজন মেহেদী বাংলানিউজকে বলেন, সৈয়দপুর পৌরসভায় নৌকার জোয়ার তৈরি হয়েছে। বর্তমান মেয়র তিনবার বিজয়ী হয়েছেন পৌরসভার উন্নয়ন না করে নিজের ভাগ্যসহ আত্মীয় স্বজনের উন্নয়ন করেছেন। তাই এবার বিপুল ভোটে নৌকা বিজয়ী হবে। ৩০ তারিখ পযর্ন্ত দলীয় অফিসই আমাদের বাসাবাড়ি।

১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সৈয়দপুর পৌরসভা। ৩৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ১৫টি ওয়ার্ডে মিশ্র ভাষাভাষির মানুষ বসবাস করেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই
উর্দুভাষী (বিহারি)। ২২টি ক্যাম্পের বাসিন্দাদের টার্গেট করে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। বিহারিদের অবস্থানের কারণে বাংলার পাশাপাশি উর্দুতেও চলছে প্রচারণা। বিহারি ভোটারদের বাগে আনতে প্রার্থীরা দিচ্ছেন চমকদার নানা প্রতিশ্রুতি।

সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, পৌর মেয়র নির্বাচনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে বিহারিরা। তাই তাদের মন জয়ে ২৪ ঘণ্টা নানা হিসাব-কৌশল করছেন নেতারা।

** নির্বাচনী উষ্ণতায় ফিকে উত্তরবঙ্গের শীতও!
** দুর্নীতিতে ভুগছে বিএনপি, কোন্দলে আ’লীগ
** ‘নাম্বার ওয়ান বানাবো পঞ্চগড় পৌরসভাকে’
** ইমিগ্রেশন চালু হবে বাংলাবান্ধায়, চলছে অবকাঠামো উন্নয়ন
** ভোটে ঝোপ বুইজে কোপ দিবো ব্যাটা’
** ‘উন্নয়নের প্রতীক নৌকা’, ‘প্রতিবাদের ধানের শীষ’
** ‘হাম জিসকো চাহেঙ্গে! উসিকো ভোট দেঙ্গে’

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
এমআইএস/এসকেএস/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।