ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

পৌরসভা নির্বাচন

ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বে সুবিধায় বিএনপি

রেজাউল করিম বিপুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বে সুবিধায় বিএনপি

ফরিদপুর: বিদ্রোহী প্রার্থী হলে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের মতো কঠোর ঘোষণা দেওয়া হলেও ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও নগরকান্দা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। বরং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজেদের অবস্থানে অটল রয়েছেন তারা।

প্রতীক পাওয়ার পর ভোটারদের দ্বারে দ্বারেও ভোট প্রার্থনা করছেন।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দলের উচ্চ পর্যায় থেকে অনুরোধের পরও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন রোববার (১৩ ডিসেম্বর) তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। দলীয় কোন্দল আর গ্রুপিংয়ের কারণে পৌরসভা দু’টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা।   

বোয়ালমারী পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মীরদাহ পিকুল (নৌকা প্রতীক)। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন মুছার ভাই পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য মোজাফফর হোসেন বাবলু (জগ প্রতীক) বিদ্রোহী হয়েছেন। এতে করে বিএনপির একক প্রার্থী আব্দুর শুকুর (প্রতীক ধানের শীষ) অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। এছাড়া জামায়াতের পৌর আমির সৈয়দ নিয়ামুল হাসান (প্রতীক নারকেল গাছ) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটি অংশের অভিযোগ,  বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন মুছার সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমানের দ্বন্দ্ব বা গ্রুপিং থাকাই এমন ঘটনার জন্য দায়ী।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, গত সংসদ সদস্য নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে দলের মনোনয়ন চাওয়ায় তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের গ্রুপিং চলে আসছে। সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তা কিছুটা শীতল হয়ে আসে। কিন্তু পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের এই দুই নেতার স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে ওই এলাকা ঘুরে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রহমানের কাছের লোক পিকুল মীরদাহ মনোনয়ন পেতে পারেন বুঝতে পেরে দলীয় কোন্দল টিকিয়ে রাখতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন মুছা পরিকল্পনা করে তার ভাই মোজাফফর হোসেন বাবলুকে বিদ্রোহী প্রার্থী করেছেন।

ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দল থেকে বোয়ালমারী পৌরসভায় শাহজাহান মীরদাহ পিকুলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে কিভাবে প্রার্থী হচ্ছেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। এসব বিষয়ে কেন্দ্র থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলীয় গ্রুপিং ও দ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, সেক্ষেত্রে আমি শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীর কথাই বলবো। আমার সঙ্গে কারো কোনো দ্বন্দ্ব বা গ্রুপিং নেই।

তবে একদিকে ভাই আর অন্যদিকে দলের দায়িত্ব উভয় সংকটে পড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন মুছা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
  
নগরকান্দা পৌরসভায়ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। দল থেকে বার বার অনুরোধ করার পরও এই নেতা তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করনেনি।

মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রায়হান উদ্দিন মিয়া (প্রতীক নৌকা) ও বিএনপির প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান মুকুল (প্রতীক ধানের শীষ)।

এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পৌর যুবলীগের সভাপতি মুরাদ হোসেন বিকুল (জগ প্রতীক) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। ফলে এ পৌরসভাতেও বিএনপির একক এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বলেন, এরই মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীরা কেন্দ্র থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছেন। খুব শিগগিরই স্থায়ীভাবেও বহিষ্কৃত হবেন তারা। সেক্ষেত্রে তারা এখন আর আওয়ামী লীগের কোনো অংশ নন। অতএব আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীও তাদের সঙ্গে থাকবেন না এবং সমর্থন করবেন না।  

বাংলাদেশে সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
আরকেবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।