ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

আ’লীগের অন্তদ্বন্দ্ব, সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি

সুমন সিকদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
আ’লীগের অন্তদ্বন্দ্ব, সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরগুনা: বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্তদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ।



আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ পৌরসভায় এবার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান।

আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী হওয়ায় এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে জয়যুক্ত হতে আশাবাদী বিএনপি। তাদের ধারণা জামায়াত কোনো প্রার্থী না দেওয়ায় এখানে জামায়াতের ভোটগুলো বিএনপির বাক্সে যাবে। কেননা বিগত উপজেলা নির্বাচনে এখানে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল। তাই তাদের ভোটগুলো বিএনপির বাক্সেই যাবে এমন প্রত্যাশা বিএনপি নেতাদের।

বরগুনা পৌর শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এবার ব্যক্তি দেখে ভোট দেবেন তারা। আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থীই বরগুনা পৌরবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন তারা। কেউ আবার সরাসরি নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কথাই বলছেন। আবার অনেকেই কাকে ভোট দেবেন তারা তা সরাসরি বলছেন না। বিএনপির অবস্থা জানতে চাইলে অনেকেই বলেন প্রার্থীর কোনো ভোট নাই বিএনপির কিছু ভোট আছে সেইগুলোই তিনি পাবেন।

অ্যাডভোকেট মো. কামরুল আহসান মহারাজ তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় মুখ। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। দলের জন্য তার অবদান নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। স্বচ্ছ ও সৎ ব্যক্তি হিসেবেও রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি। যুক্ত আছেন আইন পেশার সঙ্গে। এরই মধ্যে বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হয়ে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইনজীবীদের।

একদিকে নৌকার প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও উন্নয়নের ধারাকে সমুন্নত রাখতে সবাই নৌকায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে এমন প্রত্যাশা নৌকার সমর্থকদের। তরুন প্রজন্মের এ তুর্কি ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাক লাগিয়ে দিতে পারেন সবাইকে।

এদিকে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচন করছেন বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন। তিনি জগ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। শাহাদাত হোসেন ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

নির্বাচনের পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পৌরবাসীকে প্রথম শ্রেণির সব সুযোগ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। বরগুনা পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে শাহাদাত হোসেনের জন্য রয়েছে আলাদা সহানুভূতি। যে কারণে শহরের গরীব শ্রেণির লোকজনের ভোটগুলো তিনি পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

জনপ্রিয়তার দিক থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পর পর দুইবার নির্বাচিত বরগুনা পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে তিনি নারিকেল গাছ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে পরাজিত হলেও জনপ্রিয়তার কমতি নেই তার। বরগুনা পৌরসভাকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত করার পেছনেও রয়েছে তার আপ্রাণ চেষ্টা। তাই একটা শ্রেণি আছে যাকে তারা এখনো ভালোবাসে এবং নির্বাচনে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে সহযোগিতা করবে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের এ ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে বরগুনা পৌরসভায় বিএনপি তাদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেবে বলে মনে করছেন। এখানে ধানের শীষ নিয়ে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন এস এম নজরুল ইসলাম। ব্যক্তিগত ইমেজ অতোটা ভালো না থাকলেও প্রতীকের ইমেজ কাজে লাগিয়ে পৌর নির্বাচনে তাক লাগাতে চান এ প্রার্থী। সেই সঙ্গে জামায়াতের একটি বড় সাপোর্ট পাবেন তারা, তাই জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী তারা।

এছাড়াও এ পৌরসভায় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে লাঙল প্রতীক নিয়ে নামমাত্র মাঠে আছেন জাতীয় পার্টির সদর উপজেলা আহ্বায়ক মো. আ. জলিল। এক সময় জাতীয় পার্টির প্রতাপ থাকলেও এখন তা ফিকে হয়ে গেছে। এখানে আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মাহবুবুল আলম মান্নু শুধু নামেই প্রার্থী হিসেবে আছেন।

নির্বাচনী হালচাল নিয়ে কথা হয় বরগুনা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তপন সিকদারের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন আসছে ভোটও দিবো তবে কাকে দিবো তার জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর নিজের ভোট না থকেলেও জামায়াত ও বিএনপির ভোটগুলো তিনি একচেটিয়া পাবেন। সেক্ষেত্রে কে জয়ী হবেন সেটা ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা বেলা ছাড়া বলা সম্ভব নয়।

তবে যেই জয়ী হোক না কেন অবহেলিত উপকূলীয় জনপদের এ পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করবে এমন প্রত্যাশা পৌরবাসীর।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।