রাজ্জাক ছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একমাত্র এবং প্রকৃত ‘নায়করাজ’। চলচ্চিত্রের মতো একটি জটিল মাধ্যমে কাজ করেও তিনি ছিলেন ‘মি. ক্লিন’।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের এ অবিসংবাদিত রাজার মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। এই নায়ক অনন্তের পথে চলে গেলেও, কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে তার দ্বীপ নেভে নাই। আর তাই চলচ্চিত্রের অগ্রজ ও অনুজের কাছে রাজ্জাক নামটি গর্ব আর অনুপ্রেরণার।
সাদাকালো থেকে রঙিন পর্দা, রাজ্জাক অভিনয় করেছেন অবিরত। কখনো নীল আকাশের নীচে হেটেছেন রোমান্টিক নায়ক হয়ে, কখনো হাজির হয়েছেন পিতার বেশে আবার কখনো হয়েছেন সংগ্রামী যোদ্ধা। অভিনয় দিয়েই সাধারণ থেকে হয়েছেন কিংবদন্তি। নায়ক থেকে উপাধি পেয়েছেন নায়ক রাজ।
১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন রাজ্জাক। নায়করাজ নামে পরিচিত হলেও তার পরিবারিক নাম আবদুর রাজ্জাক। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) চলে আসেন তিনি।
রাজ্জাকের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। নায়ক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ হয় জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে সুচন্দার বিপরীতে। তারপর থেকে একাধারে অভিনয়, প্রযোজনা ও পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গন দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি।
‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘আলোর মিছিল’, ‘ছুটির ঘণ্টা’সহ মোট ৩০০টির বেশি বাংলা ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বেশ দাপটের সঙ্গে ঢালিউডে সেরা নায়ক হয়ে অভিনয় করেন তিনি।
রাজ্জাক পরিচালনা করেছেন ১৬টি চলচ্চিত্র। গড়ে তোলেন রাজলক্ষী প্রোডাকশন হাউজ। প্রযোজক হিসেবে তার যাত্রা হয় ‘রংবাজ’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর বেশ কিছু সিনেমা প্রযোজনাও করেছেন এই কিংবদন্তি।
দেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে নায়করাজ ২০১৫ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ পুরস্কারে ভূষিত হন। শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন মোট পাঁচবার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পান ২০১৩ সালে। এছাড়াও বাচসাস পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
১৯৬২ সালে খায়রুন নেসার (লক্ষ্মী) সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রাজ্জাক। তাদের সুখের দাম্পত্যে তিন পুত্র ও দুই কন্যার জন্ম হয়। তারা হচ্ছেন- রেজাউল করিম (বাপ্পারাজ), খালিদ হোসেইন (সম্রাট), নাসরিন পাশা শম্পা, রওশন হোসেন বাপ্পি, আফরিন আলম ময়না। এদের মধ্যে দুই পুত্র বাপ্পারাজ ও সম্রাটও বাবার মতোই নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
এনএটি