ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

অতিথি পাখির ডানায় ভর করে...

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৫
অতিথি পাখির ডানায় ভর করে... অর্ক মুখার্জি / ছবি: নূর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লম্বা চুল-দাড়িতে ঢাকা চেহারা। ভারী শরীর।

তার সঙ্গে সামঞ্জস্য করে গম্ভীর কণ্ঠ। এই হচ্ছেন অর্ক মুখার্জি। তিনি মঞ্চে উঠলে, মাইক্রোফোনে মুখ রাখলে, কি ঘটে যেতে পারে, সেটা ১২ নভেম্বর সন্ধ্যার আর্মি স্টেডিয়াম একেবারে চাক্ষুষ দেখে ফেলেছে। যতোক্ষণ অর্কর গান ছিলো, কথা ছিলো, যন্ত্রসংগীত বেজেছে; স্টেডিয়াম যেনো ফেটে পড়তে চেয়েছে দর্শকদের উচ্ছ্বাসে-আবেগে। মাতানোর এমন কলাকৌশল সাজানো তার কণ্ঠে, অভিব্যক্তিতে।

কলকাতায় জন্ম নেয়া অর্ক দু’জন সঙ্গী নিয়ে মঞ্চে উঠলেন কিরণ চন্দ্র রায় ও চন্দনা মজুমদারের গানের পর। এসেই ‘হাই-হ্যালো’র সুরে, ‘বাংলাদেশ, ভালো আছো?’ এরপরের কথায় কণ্ঠে পর্যাপ্ত বিনয়, ‘যে স্টেজে ফরিদা পারভীনের মতো শিল্পী, সাঁই জহুরের মতো শিল্পী, পবন দাশ বাউলের মতো শিল্পীরা অনুষ্ঠান করেন; সেই পাড়ার বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ানোর অধিকারও আমার নেই। ’ এমন বিনয় তো প্রকৃত শিল্পীদের কণ্ঠেই মানায়। একটু ঘুরিয়ে বললে, প্রকৃত শিল্পীরাই দেখাতে পারে এমন বিনয়। সবাই তাই মুহূর্ত গোণে কখন অর্ক তার কণ্ঠ ছড়িয়ে দেবেন রাতের আকাশে!

তিনি ঠোঁটে রাখলেন কাজু নামক যন্ত্র, সুর তুললেন তাতে। হাজার দর্শকের চিৎকার একটা কোরাস তুলে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছড়িয়ে গেলো। শুরু করলেন প্রভাতী গান দিয়ে, এরপর গুজরাটি ফোক, ‘সে এক রসিক পাগল’, ‘বিয়াতে আইসাছে পালকি’, ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে’, মাঝে একটি ফরাসি ফোকও শুনিয়ে দিলেন অর্ক।

ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্ট-এর প্রথম দিন বিদেশী শিল্পীর তালিকায় আরও ছিলেন সাঁই জহুর। তার গানের সময় পুরো মঞ্চ যেন কোনো দরগাহ! পবিত্রতা ছড়িয়ে যাচ্ছে! একসময় দরগাহ-মাজারেই গান করতেন সাঁই। পোশাকে-নৃত্যের তালে, এমনকি তিনি যে একতারাটি ব্যবহার করেন, সেটিতেও এনেছেন স্বকীয়তা। সুন্দর করে সাজিয়েছেন। ভারী কণ্ঠে তিনিও মাতিয়ে গেলেন ঊর্দু সুফিতে।

প্রথমদিনের আয়োজনে একেবারে শেষ শিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠলেন পাপন। সঙ্গে তার ব্যান্ড ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি। তার নাম ঘোষণার পর থেকে গান শুরু হওয়া পর্যন্ত মিনিট বিশেকের অপেক্ষা। এমটিভির কোক স্টুডিওর কল্যাণে পাপনকে চিনতে বাকি নেই কারও। খুঁজে খুঁজে তার প্রত্যেকটি গান শুনে ফেলেছেন, এমন শ্রোতারও অভাব নেই। আসামে জন্ম নেয়া পাপন বাংলা বলতে পারেন ভাঙা ভাঙা। তার সঙ্গে ইংরেজি, হিন্দি মিশিয়ে তিন-ভাষায় প্রয়োজনীয় কথা বলে গেলেন গানের ফাঁকে ফাঁকে। বুঝিয়ে গেলেন কেন এই গান, এই শব্দ, বাক্যের প্রেক্ষাপট, গান-গল্প।

পাপনের গানের শেষদিকে গিয়ে দর্শক বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়লো, হঠাৎই। একদল উদ্দাম নাচতে নাচতে ছুটে চলে আসতে চাইলো মঞ্চের দিকে। একদল সমস্বরে বলে উঠলো, ‘আরও আরও গান চাই। ’ কিন্তু ততোক্ষণে যে ঘড়ির কাঁটা রাত একটা পেরিয়ে আরও অনেকটা দূর গড়িয়ে গেছে। পাপন তাই ‘দিনে দিনে খসিয়া পড়িবে’, ‘ও মেঘ কেন চলে যাও’, ‘কে তোকে নজরি লাগায়’, ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’সহ আরও ক’টা গান গেয়ে বিদায় নিলেন।

এবারই ছিলো পাপনের প্রথম বাংলাদেশ সফর। মেরিল নিবেদিত এবং মাছরাঙা টেলিভিশন ও সান ইভেন্টস আয়োজিত এ ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট চলবে আরও দুই দিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৫
কেবিএন/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।