ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

অনুদানের অনেক ছবি অন্ধকারে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৬
অনুদানের অনেক ছবি অন্ধকারে

মুক্তি না পাওয়া সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্রের সংখ্যা বাড়ছে। কয়েক বছরের হিসাব অনুযায়ী এ তালিকা বেশ লম্বা।

অনুদানের ছবি নির্মাণ কিংবা মুক্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার সুযোগ না থাকলেও এমনটাই ঘটছে।  

২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছয়টি চলচ্চিত্রকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ছবির কাজও শুরু হয়েছে। ছবি সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পুরনো বছরের পুনরাবৃত্তি নয়, যথাসময়ে নির্মাণ কাজ শেষ করে এগুলো মুক্তি দেওয়া হবে। এ মৌসুমের ছবিগুলো হলো- মাহমুদ দিদারের ‘বিউটি সার্কাস’, এন রাশেদ চৌধুরীর ‘চন্দ্রাবতীর কথা’, ফাখরুল আরেফীনের ‘ভুবন মাঝি’, মাসুদ পথিকের ‘মায়া-দ্য লস্ট মাদার’, শামীম আখতারের ‘রীনা ব্রাউন’ ও নূরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’।  

২০১৩-১৪ অর্থবছরে অনুদান পাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে মাত্র দুটি এখন পর্যন্ত মুক্তির আলোয় এসেছে। এগুলো হলো প্রসূণ রহমানের ‘সুতপার ঠিকানা’, নাদের চৌধুরীর ‘লাল চর’ (শুরুতে এর নাম ছিলো ‘নদী উপাখ্যান’) এবং রওশন আরা নিপার ‘মহুয়া সুন্দরী (শুরুতে নাম ছিলো ‘মহুয়া মঙ্গল’)।

মুক্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘লাল সবুজের সুর’। কিছুদূর কাজ এগিয়েছে ও ড্যানি সিডাকের ‘কাসার থালায় রুপালি চাঁদ’-এর। অন্যদিকে ড. সাজেদুল আওয়ালের ‘ছিটকিনি’ ও জাঁনেসার ওসমানের ‘পঞ্চসঙ্গী’র খবর জানা যায়নি।   

২০১২-১৩ অর্থবছরে অনুদান পাওয়া ছবির তালিকায় মুক্তি পেয়েছে মাত্র তিনটি। এগুলো হলো- আনিসুল হকের গল্প অবলম্বনে শাহ আলম কিরণের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘একাত্তরের মা জননী’, মান্নান হীরার গল্প, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় শিশুতোষ ছবি ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’ এবং জাহিদুর রহমান অঞ্জনের গল্প, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘মেঘমল্লার’ (শুরুতে নাম ছিলো ‘রেইনকোট’)।

কবে মুক্তি পাবে জানা যায়নি এমন ছবির মধ্যে রয়েছে প্রয়াত তারেক মাসুদের গল্প ও চিত্রনাট্যে ক্যাথরিন মাসুদের পরিচালনায় ‘কাগজের ফুল’, প্রয়াত সেলিম আল দীনের রচনায় নারগিস আক্তারের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘যৈবতী কন্যার মন’, হাসান আজিজুল হকের গল্প ও খান সরফুদ্দিন মোহাম্মদ আকরামের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘খাঁচা’, প্রয়াত শহীদুল জহিরের গল্প ও টোকন ঠাকুরের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘কাঁটা’।

২০১১-১২ অর্থবছরে ছয়টি ছবিকে অনুদান দেওয়া হয়েছিলো। এর মধ্যে চারটি পূর্ণদৈর্ঘ্য, দুটি শিশুতোষ ছবি। মারুফ হাসান আরমানের ‘নেকড়ে অরণ্যে’, প্রশান্ত অধিকারীর ‘হাডসনের বন্দুক’ ও সৈয়দ সালাউদ্দীন জাকীর ‘একা একা’ ছবিগুলো কবে মুক্তি পাবে জানা নেই। পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবির মধ্যে তানভীর মোকাম্মেলের ‘জীবনঢুলী’, গাজী রাকায়েতের ‘মৃত্তিকা মায়া’ ও দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘হেডমাস্টার’ মুক্তি পেয়েছে।

২০১০-১১ অর্থবছরে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ছয়টি ছবির মধ্যে এখনও আলোর মুখে দেখেনি সেলিনা হোসেনের উপন্যাস অবলম্বনে ফারুক হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া’ ও মির্জা সাখাওয়াৎ হোসেনের ‘ধোঁকা’। চারটি মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি হলো- মানিক মানবিকের ‘শোভনের স্বাধীনতা’, মুরাদ পারভেজের ‘বৃহন্নলা’, নির্মলেন্দু গুণের গল্প অবলম্বনে মাসুদ পথিকের ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ এবং পিএ কাজলের ‘মুক্তি’।

অনুদানের ছবির ক্ষেত্রে ২০০৯-১০ ছিলো বেশ ভালো মৌসুম। কারণ এ অর্থবছরের সব ছবিই মুক্তি পেয়েছে। এগুলো হলো আকতারুজ্জামানের ‘সূচনা রেখার দিকে’, নাসিরউদ্দীন ইউসুফের ‘গেরিলা’, বেলাল আহমেদের ‘অনিশ্চিত যাত্রা’, সামিয়া জামানের ‘ছেলেটি’, সজল খালেদের ‘কাজলের দিনরাত্রি’ ও কাজী মোরশেদের ‘একই বৃত্তে’।

২০০৮-০৯ অর্থবছরে সালের অনুদানের ছবিগুলোর মধ্যে মোরশেদুল ইসলামের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ও শাহাজাহান চৌধুরীর ‘মধুমতি’ মুক্তি পেয়েছে। একই বছর অনুদান পাওয়া জুনায়েদ হালিমের ‘স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের গল্প’ ছবি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। অন্যদিকে ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে এনামুল করিম নির্ঝরের ‘নমুনা’ মুক্তি পায়নি। বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে এর মুক্তি স্থগিত করা হয়।   
 
১৯৭৬-৭৭ অর্থবছর থেকে দেশীয় চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদানের প্রথা চালু হয়। এরপর বিভিন্ন অর্থবছরে অনুদান স্থগিত হয়ে গেলেও একেবারে থেমে থাকেনি এই প্রক্রিয়া। ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত নিয়মিতভাবেই চলচ্চিত্রে অনুদান প্রদান করা হচ্ছে।

সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে অনুদানের নিয়মনীতিতেও এসেছে কিছু পরিবর্তন। উল্লেখ করার মতো পরিবর্তন ঘটেছে অনুদানের অর্থের পরিমাণে। ২০১০ সাল থেকে অনুদানের অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫ লাখ টাকা, যা আগে ছিলো ২৫ লাখ টাকা। এ অর্থের সঙ্গে পরিচালক ১০ লাখ টাকা সমপরিমাণের কারিগরি সুবিধা পাচ্ছেন এফডিসি থেকে।

অনুদানের চলচ্চিত্রে প্রদানকৃত অর্থ জনগণের। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ও নির্মাতার কিছু দায়বদ্ধতা থাকলেও অনিয়মের খবরও শোনা যায়। অনেক নির্মাতার বিরুদ্ধে সময়মতো ছবির কাজ শুরু না করার অভিযোগও রয়েছে।

তথ্য মন্ত্রণালয় চলচ্চিত্র শাখা কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির সূত্র অনুযায়ী ‘অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র অনুদানের প্রথম চেকপ্রাপ্তির ৯ (নয়) মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে। তবে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্ক্রিপ্টের প্রয়োজনে সরকার ওই সময় বৃদ্ধি করতে পারে। ’ এ ‘তবে’র সুযোগ নিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন অনেক নির্মাতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৬
এসও/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।