যে যতো বড় তার বিরুদ্ধে অভিযোগও ততো। দেশীয় চলচ্চিত্রের নাম্বার ওয়ান নায়ক শাকিব খানের বেলায় এই কথাটি সত্য হয়ে ধরা দিলো।
যে এফডিসিতে তার উত্থান সেখানকার মানুষদেরও বিস্তর অভিযোগ এই চিত্রনায়কের বিরুদ্ধে। এফডিসি বা সাজঘরে থাকলেও সেখানে প্রয়াত শিল্পীদের
জানাজায় অংশগ্রহণ না করার অভিযোগ নিয়মিত। বাংলানিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আরও কিছু ‘তেতো’ সত্য।
শাকিব অভিনীত সবশেষ ছবি ‘শিকারি’ মারকাটারি সাফল্য পেয়েছে। যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবিটিতে দারুণ নৈপুণ্য দেখানোর সুবাদে ‘কিং খান’খ্যাত এই নায়ক দুই বাংলাতেই প্রশংসিত হচ্ছেন। কিন্তু সেই চিরচেনা ‘নকল ছবির নায়ক’ হয়েই রয়ে গেলেন তিনি। তামিল ছবির গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে এটি। এজন্য অনুমতি পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। নকল ছবির মাধ্যমেই ‘এক নম্বর নায়ক’-এর তকমা ধরে রেখেছেন শাকিব। সমালোচকদের প্রশ্ন, এতে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন, কিন্তু চলচ্চিত্র শিল্পের কী লাভ?
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি পদটি শাকিবের দখলে। দ্বিতীয়বারের মতো এই চেয়ারে বসেছেন তিনি। শপথ নেওয়ার পর তার মুখে শোনা গিয়েছিলো, ‘শিল্পীরা আমাকে ভোট দিয়ে আবার নির্বাচিত করেছেন। এজন্য তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। শিগগিরই একটি বনভোজন করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। নবীন-প্রবীণদের নিয়ে শিল্পীদের কল্যাণে ভালো কিছু কাজ করতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা আশা করছি। ’
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘বনভোজন’ সফল করা ছাড়া আর কোনো ভূমিকাই রাখেননি শাকিব। এক বছর পেরিয়ে গেলেও শিল্পী সমিতির উল্লেখযোগ্য অবদান নেই চলচ্চিত্র শিল্পে। তবে হ্যাঁ, ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন নায়ক ও নেতা শাকিব। সম্প্রতি প্রেক্ষাগৃহে কলকাতার বাংলা ছবি ‘কেলোর কীর্তি’র প্রদর্শন ঠেকাতে বৃষ্টিভেজা দিনে মানববন্ধনে দেখা গেছে তাকে। এ নিয়েও আছে সমালোচনা। ভারতীয় ছবি আমদানির বিপক্ষে লড়াইও করছেন, আবার ভারতের (কলকাতা) সঙ্গে যৌথ প্রযোজনাও করছেন- এই দ্বৈতসত্ত্বার শাকিবকে বোঝা আসলেই মুশকিল। সূত্র মতে, ‘শিকারি’র পর যৌথ প্রযোজনার আরও কয়েকটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় তাকে ঘিরে একটাই জিজ্ঞাসা- কী চান শাকিব খান? অনেকের মন্তব্য, তিনি হয়তো নিজেই জানেন না কি চান! অথবা তিনি কী অন্য কারো দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেন?
এদিকে শাকিবের বিরুদ্ধে শিডিউল ফাঁসানোর অভিযোগ বেশ পুরনো। মূলত এ কারণে তারই জীবনকাহিনি নিয়ে নির্মাণাধীন একটি ছবি চিরতরে বন্ধ হয়েছে। গত বছর এম এ রহিমের পরিচালনায় শুরু হয়েছিলো ‘রানা দ্য ফাইটার’ নামের ছবিটির কাজ। শাকিবের প্রকৃত নাম মাসুদ রানা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এর নামকরণ করা হয় ‘রানা দ্য ফাইটার’। এম এ রহিম বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বেশি কিছু বলতে চাই না। ছবিটি বন্ধ হওয়ার একটাই কারণ, শাকিব সিডিউল নিয়ে অনেক ঝামেলা করেছেন। এরপর প্রযোজক ছবিটি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ’
শাকিবের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগও বেশ পুরনো। বিনোদন সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র কলাকুশলীরা তার আচরণে প্রায়ই মনোক্ষুণ্ন হন। ‘তারকা নায়ক’ হওয়ায় সুবাদে, চলচ্চিত্রের স্বার্থে তার বিরুদ্ধে এসব খবর প্রকাশিত হয় না। অনেকে মনে করেন, শাকিবের বেড়ে ওঠা শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিলো না। এ কারণে তিনি মানুষকে মর্যাদা দিতে কার্পণ্য করেন। চলচ্চিত্রে তার উত্থান বেশ সংগ্রামী ও ঘটনাবহুল হলেও নিজেকে শোধরাতে পারেননি তিনি। এবং ভুলে গিয়েছেন নিজের অতীতও।
এ প্রসঙ্গে বলা চলে, ক্যারিয়ারে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য একের পর এক মানহীন, সমালোচিত ও নকল ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব। এখন দিন বদলালেও অধিকাংশ অশ্লীল ছবির নায়িকার সঙ্গে তিনি পর্দা ভাগ করেছেন। শাকিব অভিনীত অশ্লীল ছবির তালিকাও বেশ লম্বা। সেই তুলনায় তার মনে রাখার মতো ভালো ছবি কয়টি? সালমান শাহ, মান্না, রিয়াজ, ফেরদৌসের পরবর্তী নায়ক হিসেবে শাকিব কতোটা গুরুত্বপূর্ণ বা কতোটা সফল? সতের বছরের ক্যারিয়ারে ‘অমর নায়ক’ হওয়ার পথে শাকিব কী একটুও এগিয়েছেন?
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩১ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬
এসও/জেএইচ