বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনের সামনে দাঁড়াতেই চোখে পড়লো চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরকে! দু’জন এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছেন, দেখলেই যেন মনে হয় মিশুক মুনীরকে তারেক মাসুদ দেখিয়ে দিচ্ছেন কোন ফ্রেমে ক্যামেরা ধরতে হবে। এটি তাদের একটি স্থিরচিত্র।
পাঁচ বছর হলো তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর নেই। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় এই দুই গুণীসহ আরও তিন চলচ্চিত্র কর্মীর মৃত্যু হয়। শনিবার (১৩ আগস্ট) তাদের স্মরণে সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও স্মরণ আলোচনা অনুষ্ঠান।
তারেক মাসুদের সহোদর নাহিদ মাসুদ বলেন, ‘ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন খুব চিন্তাশীল মানুষ। তার সব ভাবনা ছিলো দেশ ও চলচ্চিত্র নিয়ে। ব্যক্তিগত কাজে তিনি বাইরে গেলেও দেশের খবর নিতে ভুলতেন না। অকালে তাদের মতো মানুষের চলে যাওয়া শুধু পরিবারের ক্ষতি নয়, পুরো দেশের ক্ষতি। তারেক মাসুদ সবসময় তরুণদেরকে ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুপ্রাণিত করতেন। ’
মিশুক মুনীরের সহোদর আসিফ মুনীর বলেন, ‘খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। মিশুক মুনীরকে দেখেই বড় হয়েছি। তিনি টিভি সাংবাদিকতার কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছিলেন। দেশের এই দুর্দিনে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মতো মানুষের খুব দরকার ছিলো। ’
স্মরণ আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি স্থপতি লাইলুন নাহার স্বেমি, চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম এবং জহির রায়হানের পুত্র অনল রায়হান।
প্রারম্ভিক আলোচনা ও অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন। সভাপতিত্বে ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এখানে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে নিয়ে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি প্রয়াত অন্য দুই চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান ও আলমগীর কবিরকে নিয়ে আলোচনা করেন অতিথিরা।
আলোচনার আগে বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রদর্শিত হয় তারেক মাসুদ নির্মিত শেষ চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’। এটি মুক্তি পায় ২০১০ সালে। এতে অভিনয় করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, নাজমুল হুদা বাচ্চু, মোসলেম উদ্দিন, নাসরিন আক্তার, রিকিতা নন্দিনী শিমু ও তিশা।
সন্ধ্যা ৭টায় তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ নিহত চলচ্চিত্রকর্মীদের স্মরণে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তারেক মাসুদ নির্মিত চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’ বিষয়ে আলোচনা করেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও অধ্যাপক আ. আল মামুন।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ (এফএফএসবি), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং প্রজন্ম ’৭১। এটি ছিলো সবার জন্য উন্মুক্ত।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৬
টিএস/জেএইচ